নারীর যোনি হল একটি সুড়ঙ্গ পথের মতো যা যোনিদ্বার থেকে জরায়ু পর্যন্ত প্রসারিত। নারীর জীবনে তার যোনিতে ঘটে নানা পরিবর্তন। শিশুদের যোনি পূর্ণ বয়স্কা নারীর যোনি থেকে ভিন্ন। শিশু কন্যার মাসিক শুরু হয়নি এমন কন্যার যোনির পাশের পর্দাটি পূর্ণবর্তী নারীর তুলনায় পাতলা হয়। এ পরিবর্তন ঘটে এস্ট্রোজেন হরমোনের ফলে যা নির্গত হয় ডিম্বাশয় থেকে। যৌনক্রিয়া এবং সন্তান জন্মের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে নারী যোনি।
নারী যোনি হল একটি নালী যা প্রায় পৌনে ৩ ইঞ্চি থেকে সোয়া ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, যার চারপাশে থাকে আঁশ ও পেশির কলা, কিন্তু স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম নামক কোষের স্তরের দ্বারা আবৃত থাকে, এ নালীর প্রাচীরগুলো স্বাভাবিকভাবে একে অপরের ওপর ভেঙ্গে পড়ে এবং তাতে নানা ভাঁজ সৃষ্টি হয়। এর ফলে যৌনমিলন বা সন্তান প্রসবের সময় নারী যোনি সম্প্রসারিত হতে পারে। মূত্রনালী নারী যোনির সমমুখ ভাগে থাকে এবং মলদ্বার থেকে যোনির উপরের দিকে তৃতীয় স্তরে পৌঁছেছে। পায়ু যোনি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে এক ধরনের তন্তুবিশিষ্ট পেশির দ্বারা। নারী যখন সন্তান ধারণোক্ষম থাকে তখন যোনি থেকে নির্গত রসে অম্লত্বের ভাব থাকে। যার ফলে যোনিতে ক্ষতিকারক রোগজীবাণু বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু নারী ঋতুবর্তী হবার আগে বা ঋতু বন্ধ হওয়ার বা গবহড়ঢ়ধঁংব হবার পরের বছরগুলোতে ক্ষারধর্মী রস নির্গত হয়। এই অবস্থায় রোগজীবাণু বেড়ে উঠতে পারে এবং যোনিতে এক ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে যার নাম অ্যাট্রোফিক ভ্যাজাইনাইটিস। নারী যোনির প্রাচীরগুলো খুব পিচ্ছিল হয়ে থাকে সার্ভিক্স বা গর্ভাশয়ের সংকীর্ণ অংশ এবং বার্থোলিন গ্রন্থির রসক্ষরণের ফলে। যোনক্রীড়ার সময় নারী যোনির এপিথেলিয়াম থেকে নারী যোনির নালীতে প্রবেশ করে এই ক্ষরিত রস। সব নারীর ক্ষেত্রে নারী যোনি থেকে এক ধরনের ক্ষরণ হওয়াটা স্বাভাবিক।
এ ক্ষরণের বৃদ্ধি ঘটে ভ্রূণ সৃষ্টির মুহূর্তে বা অধিক যৌন উত্তেজনাকালে। সতীচ্ছদের অন্য নাম কুমারীচ্ছদ। গ্রীসের বিবাহের দেবী হাইমেনের নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়। সতীচ্ছদের শারীরবৃত্তির গুরুত্ব কি এবং কতটা তা আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে তা সব জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে কুমারীত্বের প্রতীক হিসেবে। সতীচ্ছদ নানা আকারে ও আকৃতির হতে পারে এবং কুমারীত্বের সঙ্গে এর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণত সতীচ্ছদ খুবই পাতলা ত্বকের ঝিল্লি বিশেষ, যা সহজেই ছিন্ন হওয়া সম্ভব, মিলনকালে পুরুষের বিশেষ অঙ্গের চাপ ছাড়াও-
- দৌড় ঝাপ
- ব্যায়াম
- ঘোড়ায় চড়া
- সাইকেল চালানো এবং
- আত্মরতি করার ফলেও সতীচ্ছদ ছিন্ন হতে পারে।
নারীর বিশেষ অঙ্গের রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় বা তুলার ন্যাপকিন ব্যবহারে অর্থাৎ ট্যাম্পুন ব্যবহারে নারীর সতীচ্ছদ ছিন্ন হতে পারে। কুমারীত্বের প্রতীক না হলেও প্রায়ই দেখা যায় প্রথম যৌনমিলনের সময় সতীচ্ছদ ছিন্ন হয়। সাধারণের মধ্যে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, সতীচ্ছদ যদি অক্ষত থাকে তবে সেই নারী কখনো কোনো পুরুষের সঙ্গে সহবাস করেনি কিন্তু এ ধারণাও ঠিক নয়। জননেন্দ্রিয়ের এলাকার মধ্যে শুক্রাণু প্রবেশ করলে অতি প্রশ্রয়ের ফলে তা সতীচ্ছদের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে চলে যেতে পারে। আর তখন ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
পর্যায় ভিত্তিক যে রক্তস্রাব প্রথম শুরু হয় জরায়ু থেকে তাকে রজোদর্শন বলে এবং ঋতুচক্রের একটি পর্ব মাত্র যা নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হরমোনগুলোর দ্বারা। রজোদর্শনের ৪/৫ বছর পূর্ব থেকে হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্রন্থিকে নির্দেশ দেয় কিশোরীর উচ্চতা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিতে পারে যে হরমোন তা নিষিক্ত করতে। এটা সাধারণত চূড়ান্ত পর্বে উঠে রজোদর্শনের প্রায় ২ বছর আগে এবং ক্রমশ কমে আসে মাসিক শুরু হবার সময়। পিটুইটারি হরমোন ও ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণুগুলোকে নির্দেশ দেয় যৌন হরমোন এস্ট্রোজেন নিঃসৃত করতে যা প্রধানত স্তনকে বৃদ্ধি করতে, যৌনকেশ বৃদ্ধি করতে এবং জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রথম রজোদর্শনের বছর খানিক পূর্বে মেয়েরা লক্ষ্য করতে পারে যোনিতে কিছু একটা ক্ষরণ হচ্ছে। যেহেতু দেহ যৌনতার ব্যাপারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে তাই দেহের বাইরে এবং অভ্যন্তরে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে এর সঙ্গে। দেহের অভ্যন্তরে এস্ট্রোজেন এবং পিটুইটারি হরমোনের হ্রাস বৃদ্ধি এক ধরনের পারসপরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে শুরু করে যা মাসিক চক্রকে অব্যাহত রাখবে।
প্রথম মাসিক হয় যখন এস্ট্রোজেন পরিমাণ কমে যায়, জরায়ুর গড়ে ওঠা আস্তরণ পরিত্যাগ করে ও তার গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন না নিয়েই, তারপর তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং রক্ত ও কোষগুলো জরায়ুতে পড়ে জরায়ুর মুখ দিয়ে এবং সেই পথে দেহের বাইরে। পরবর্তী সময়ের মাসিক চক্রের মতো একই ধরনের রক্ত প্রথম রজঃস্রাবে নির্গত হলেও ডিম্বাশয় কোনো পরিণত ডিম্বাণু উৎপাদন করে না। ডিম্বাশয়ের পূর্ণমাত্রায় কাজ করতে সময় লেগে যায় প্রায় কয়েক মাস এমনকি এক বছর ও কমবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো না পর্যন্ত। যখন তার সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়ে ওঠে যদিও দেহ ও মনের দিক থেকে সে হয়ত পরিণত হয়ে ওঠেনি।
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment