খাজুরাহো , ভারতের মধ্যে প্রদেশের একটি ছোট গ্রাম। কিন্তু গ্রামটি সারা বিশ্বে বিখ্যাত কিছু মূর্তির জন্য । এ গ্রামের মন্দিরের গায়ে ইরোটিক মূর্তি বা শিল্পকর্ম আছে। মূর্তিগুলো ও প্রায় ১০০০ বছরের পুরনো। ওয়াল্ড হেরিটেজ ও ভারতের সাতটি আশ্চর্য দর্শনের মধ্যে এটি একটি ।
কিভাবে কেন এ মূর্তি গুলো তৈরি হয়েছিল , তা জানা যায়নি পুরোটা। যা কিছু জানা গেছে তা নিয়েই আমার এই পোষ্ট।
একেবারে গোড়ার দিকে এখানে ছিল ৮৫ টি মন্দির। হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় এখন আছে ২২ টি । এই ৮৫ টি মন্দির তৈরি করতে লেগেছিল ১০০ বছর। ৯৫০ সাল থেকে ১০৫০ সাল অবধি এ মন্দির ও শিল্পকর্মগুলো করা হয় । তখনকার দিনে মধ্যভারতের এ এলাকার নাম ছিল জেজেকাভুক্তি ও সেখানে রাজত্ব করত প্রতাপশালী চান্দেলা বংশ ।
এই চান্দেলা বংশের সৃষ্টি নিয়ে ইতিহাস কি বলে । রাজপুতদের সাথে অন্য বংশের মিলনের ফলে এই বংশের সৃষ্টি হয় । এবং এই বংশের প্রথম সদস্যের নাম ছিল চন্দ্রত্রেয়। যিনি ছিলেন বীর। খাজুরাহো থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিনে মানিয়াগড়ে ওরা বাস করত । তাদের কূল দেবতা ছিলেন মানিয়াদেব।
চন্দ্রত্রেয় নাম থেকেই চান্দেলা। যাদের প্রতাপ ১৪০০ সাল অবধি ছড়িয়ে ছিল ।
চন্দ্রত্রেয় বা চন্দ্রবর্মন ছিলেন একজন সেনাপতি । পূর্বের দিকের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত । দখল বেদখল হত। তার সমসাময়িক হর্যবর্ধন , যশোবর্ধনের নাম জানা যায়। পতিহার বংশের হয়ে তারা প্রথমে রাষ্ট্রকূট পরে পূর্ব ভারতের পালেদের হাত থেকে কলিঞ্জরের দূর্গ পূনদখল করেন। কিন্তু দূর্গটি পতিহারদের কাছে না দিয়ে নিজেরাই দখল করে বসেন । সেই থেকেই এই বংশের শাসক হিসেবে উত্তান হয় ।
![](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_veaV7VHw-jj-zeP19wQZS8mZdfWv6QgW8eH69hkpS5lF4NaCfcrAIO-Jo-NIzvHXBM5z5t8td6-56Wloc0-umzJHBt882_RSK6epg__6tmWaaDorsF1aTrlR0MjcVw8q42T_LgPeK6rzHL38l4gaeYcKHYy72pKQhykA=s0-d)
শিলালিপিতে পাওয়া যায় দশম শতকের রাজা ছিলেন হর্যদেব, তারপর যশোবর্ধন, ধঙ্গ, গন্ড , বিদ্যাধর। যশোবর্ধনের ছেলের লেখা ৯৫৪ সালের একটি শিলালিপিতে পাওয়া যায় । যশোবর্ধন একটি অসামান্য বিষ্ণু মন্দির তৈরি করেছিলেন । গন্ড (১০০২-১০১৭), বিদ্যাধর (১০১৭-১০২৯) রাজ্য শাসন করেন ।
![](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_uaUKuske-pRqNv-ymh4RyYqltlz3JjsW0BWWjUsxyAGiaPgdz12ubeyNgpvxY6fAkk3tpJ7BSw9VqXRIlTV3cYxMvOA33QndQg85WAbzi67QiNe3NTTrewXmTX09GZNjgyAbZxiy4sZX5Rej77IWiraFlo2J40uw3d1A=s0-d)
বিদ্যাধরের সময় চান্দেলারা গজনির সুলতান মাহমুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত এবং জয়ী হন । ১০১৯ ও ১০২২ সালে মাহমুদের সাথে তারা যুদ্ধ করেন । এ যুদ্ধে পরিবাজ্রক আল বেরুনি মাহমুদের পক্ষে অংশগ্রহন করেন । আল বেরুনিকে নিয়ে বলতে হলে বলতে হবে , তখনকার দিনে পৃথীবির সবচেয়ে ধনবান জায়গা ছিল ভারত উপমহাদেশ। মধ্যে পৃথীবি থেকে তখন দরবেশের বেশে , ব্যবসায়ীর বেশে এখানে এসে ইসলামের ভিত্তি মজবূত ও ভিতরের খবর নিয়ে যেত। আল বেরুনি ও তেমন একজন । পুরো ভারত ভ্রমন করেন। এবং এখানকার সব খবর মধ্য পৃথীবির বাদশাদের কাছে পৌছে দিতেন ।
১৩৩৫ সালে ইবনে বতুতা এ এলাকা ভ্রমন করেন । তের শতকের এ রাজ্যের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৪০০ শতকে এসে হারিয়ে যায়। সবকিছু জঙ্গল হয়ে যায় । মানুষ ও ভুলে যায় এ এলাকার কথা । কিন্তু মন্দিরগুলো পড়ে থাকে । ধ্বংস হতে থাকে আপন নিয়ম মেনেই ।
![](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_vGKwm5tdnA_De1vpCE3p0-peoUIBgz9bNiLFbgn4xru-zoT0bhewI3QozeTxG0PPHIntOeTLso8Qjr2BwHYXWZ3ZQMWX09yggxj1m4Nu1Gf_auT6zvGCUfMVnVMkBocRspJ7WgCoucpAreYfpCj7buGD5hwADKqZ76=s0-d)
ব্রিটিশদের চোখে পড়ার পর এ এলাকা আবার জেগে উঠতে শুরু করে। ১৮১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী কলিকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে লেফট্যান্ট উইলিয়াম প্রাইস নামের এক গবেষক একটি গবেষনা পত্র জমা দেন । তাতে এ এলাকার কথা বলেন । সেই সুত্র ধরে ১৮১৮ সালের ফ্রাঙ্কলিন নামের এক মানচিত্রকারের মানচিত্রে খাজোরাহো নাম ঢুকে পড়ল । ১৮৩৮ সালের ক্যাপটেন টি এস বাট জঙ্গলে আবৃত এ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন । ফিরে এসে যে রিপোর্ট করেন তাতেই সবার দৃষ্টি পড়ে খাজুরোহোর দিকে । এরপর বৃটিশরা স্হাপনাগুলো রক্ষার্থে কাজ করে।
![](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_tLppiuLpgTQeSElysDAaDBrzrm6vJz3Br3hDjSeiOtAMsUPl0G28d2ntSrk5g02NHAD9j8jaz_UNLRrUg_ka-3DiGumhumMYXzE-26o-SyXkd9lqijrgObswEcPgY0TOpAi0tsX7pwKBJTxLzkhDNC0P5GEs3nUogm9g=s0-d)
মন্দিরে এ সমগ্র চিত্র কর্ম কোন শিল্পী তৈরি করেছিলেন তা অজানাই রয়ে গেছে। কেন তৈরি করিয়েছিলেন চান্দেলারা এ শিল্পকর্মগুলো ? সে নিয়ে বিস্তর গবেষনা হয়েছে । সবচেয়ে শুদ্ধ মতবাদ হল , হিন্দুধর্মে কখন ও যৌনতাকে বেশ শিল্প রুপ দেয়া হয়েছে । আবার বেশির ভাগ ঋষি-সাধকরা মিলনে পাপ দেখেছেন । মিলন করলে ঈশ্বর সাধনায় বিঘ্ব হবে তাই ছিল তাদের দর্শন । মানব-মানবী যুগলের এ শিল্পকে মোটেই স্হান দেননি। তাদের কথায় মিলনের জন্য ঈশ্বর ধ্যানে চ্যুতি ঘটে। কামকে কঠোরভাবে বারন করছেন । মিলনকে তারা নেগেটিভই বলেছেন । এখন ও হিন্দু ধর্মের সৈন্যাসিদের জন্য মিলন বারন ।
তেমন একটি অবস্হা সৃষ্টি হয়েছিল মন্দিরগুলো নির্মানের আগে। যৌনতাকে ঘৃনা করত সবাই । এটি বিশ্রি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। রাজ্যের লোকেরা যাতে যৌনতাকে ঘৃনা না করে সেজন্য চান্দেলারা মন্দিরের গায়ে শিল্পের মাধ্যমে যৌন মিলনে উৎসাহিত করার একটি সংবাদ পৌছে দিয়েছিলেন রাজ্যবাসীকে ।
কিভাবে কেন এ মূর্তি গুলো তৈরি হয়েছিল , তা জানা যায়নি পুরোটা। যা কিছু জানা গেছে তা নিয়েই আমার এই পোষ্ট।
একেবারে গোড়ার দিকে এখানে ছিল ৮৫ টি মন্দির। হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় এখন আছে ২২ টি । এই ৮৫ টি মন্দির তৈরি করতে লেগেছিল ১০০ বছর। ৯৫০ সাল থেকে ১০৫০ সাল অবধি এ মন্দির ও শিল্পকর্মগুলো করা হয় । তখনকার দিনে মধ্যভারতের এ এলাকার নাম ছিল জেজেকাভুক্তি ও সেখানে রাজত্ব করত প্রতাপশালী চান্দেলা বংশ ।
এই চান্দেলা বংশের সৃষ্টি নিয়ে ইতিহাস কি বলে । রাজপুতদের সাথে অন্য বংশের মিলনের ফলে এই বংশের সৃষ্টি হয় । এবং এই বংশের প্রথম সদস্যের নাম ছিল চন্দ্রত্রেয়। যিনি ছিলেন বীর। খাজুরাহো থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিনে মানিয়াগড়ে ওরা বাস করত । তাদের কূল দেবতা ছিলেন মানিয়াদেব।
চন্দ্রত্রেয় নাম থেকেই চান্দেলা। যাদের প্রতাপ ১৪০০ সাল অবধি ছড়িয়ে ছিল ।
চন্দ্রত্রেয় বা চন্দ্রবর্মন ছিলেন একজন সেনাপতি । পূর্বের দিকের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকত । দখল বেদখল হত। তার সমসাময়িক হর্যবর্ধন , যশোবর্ধনের নাম জানা যায়। পতিহার বংশের হয়ে তারা প্রথমে রাষ্ট্রকূট পরে পূর্ব ভারতের পালেদের হাত থেকে কলিঞ্জরের দূর্গ পূনদখল করেন। কিন্তু দূর্গটি পতিহারদের কাছে না দিয়ে নিজেরাই দখল করে বসেন । সেই থেকেই এই বংশের শাসক হিসেবে উত্তান হয় ।
শিলালিপিতে পাওয়া যায় দশম শতকের রাজা ছিলেন হর্যদেব, তারপর যশোবর্ধন, ধঙ্গ, গন্ড , বিদ্যাধর। যশোবর্ধনের ছেলের লেখা ৯৫৪ সালের একটি শিলালিপিতে পাওয়া যায় । যশোবর্ধন একটি অসামান্য বিষ্ণু মন্দির তৈরি করেছিলেন । গন্ড (১০০২-১০১৭), বিদ্যাধর (১০১৭-১০২৯) রাজ্য শাসন করেন ।
বিদ্যাধরের সময় চান্দেলারা গজনির সুলতান মাহমুদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত এবং জয়ী হন । ১০১৯ ও ১০২২ সালে মাহমুদের সাথে তারা যুদ্ধ করেন । এ যুদ্ধে পরিবাজ্রক আল বেরুনি মাহমুদের পক্ষে অংশগ্রহন করেন । আল বেরুনিকে নিয়ে বলতে হলে বলতে হবে , তখনকার দিনে পৃথীবির সবচেয়ে ধনবান জায়গা ছিল ভারত উপমহাদেশ। মধ্যে পৃথীবি থেকে তখন দরবেশের বেশে , ব্যবসায়ীর বেশে এখানে এসে ইসলামের ভিত্তি মজবূত ও ভিতরের খবর নিয়ে যেত। আল বেরুনি ও তেমন একজন । পুরো ভারত ভ্রমন করেন। এবং এখানকার সব খবর মধ্য পৃথীবির বাদশাদের কাছে পৌছে দিতেন ।
১৩৩৫ সালে ইবনে বতুতা এ এলাকা ভ্রমন করেন । তের শতকের এ রাজ্যের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৪০০ শতকে এসে হারিয়ে যায়। সবকিছু জঙ্গল হয়ে যায় । মানুষ ও ভুলে যায় এ এলাকার কথা । কিন্তু মন্দিরগুলো পড়ে থাকে । ধ্বংস হতে থাকে আপন নিয়ম মেনেই ।
ব্রিটিশদের চোখে পড়ার পর এ এলাকা আবার জেগে উঠতে শুরু করে। ১৮১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী কলিকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে লেফট্যান্ট উইলিয়াম প্রাইস নামের এক গবেষক একটি গবেষনা পত্র জমা দেন । তাতে এ এলাকার কথা বলেন । সেই সুত্র ধরে ১৮১৮ সালের ফ্রাঙ্কলিন নামের এক মানচিত্রকারের মানচিত্রে খাজোরাহো নাম ঢুকে পড়ল । ১৮৩৮ সালের ক্যাপটেন টি এস বাট জঙ্গলে আবৃত এ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন । ফিরে এসে যে রিপোর্ট করেন তাতেই সবার দৃষ্টি পড়ে খাজুরোহোর দিকে । এরপর বৃটিশরা স্হাপনাগুলো রক্ষার্থে কাজ করে।
মন্দিরে এ সমগ্র চিত্র কর্ম কোন শিল্পী তৈরি করেছিলেন তা অজানাই রয়ে গেছে। কেন তৈরি করিয়েছিলেন চান্দেলারা এ শিল্পকর্মগুলো ? সে নিয়ে বিস্তর গবেষনা হয়েছে । সবচেয়ে শুদ্ধ মতবাদ হল , হিন্দুধর্মে কখন ও যৌনতাকে বেশ শিল্প রুপ দেয়া হয়েছে । আবার বেশির ভাগ ঋষি-সাধকরা মিলনে পাপ দেখেছেন । মিলন করলে ঈশ্বর সাধনায় বিঘ্ব হবে তাই ছিল তাদের দর্শন । মানব-মানবী যুগলের এ শিল্পকে মোটেই স্হান দেননি। তাদের কথায় মিলনের জন্য ঈশ্বর ধ্যানে চ্যুতি ঘটে। কামকে কঠোরভাবে বারন করছেন । মিলনকে তারা নেগেটিভই বলেছেন । এখন ও হিন্দু ধর্মের সৈন্যাসিদের জন্য মিলন বারন ।
তেমন একটি অবস্হা সৃষ্টি হয়েছিল মন্দিরগুলো নির্মানের আগে। যৌনতাকে ঘৃনা করত সবাই । এটি বিশ্রি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। রাজ্যের লোকেরা যাতে যৌনতাকে ঘৃনা না করে সেজন্য চান্দেলারা মন্দিরের গায়ে শিল্পের মাধ্যমে যৌন মিলনে উৎসাহিত করার একটি সংবাদ পৌছে দিয়েছিলেন রাজ্যবাসীকে ।
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment