Thursday, July 21, 2011

সেক্স এডুকেশনঃ১৫টি প্রশ্নোত্তর


মা, রুমির বোন হয়েছে। রুমি বলল বোনটাকে ওরা চাঁদমামার কাছ থেকে এনেছে। আমাকেও ওখান থেকে একটা বোন এনে দাও না মা!।
রুমির মা যেমন করে বাচ্চা হওয়ার কথা ব্যখ্যা করেছেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ অভিভাবকই বাচ্চাদের বোঝানোর সময় একইভাবে বলেন। কিন্তু বহু আধুনিক মা-বাবা আবার এটা করতে রাজি হন না। তারা সত্যি কথাটা বলতে চান, তবে বাচ্চা বুঝতে পারবে এমন করে। এরকমই হওয়া উচিত। যে দেশ ২০১০-এর শেষে বিশ্বের সব থেকে বেশি এইডস রোগগ্রস্ত মানুষের বাসস্থান হবে, সেই দেশের শিশুদের এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল না করলে বিপদ যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজে অনুমান করা সম্ভব নয়।
অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের সঙ্গে অনেক কথাই আলোচনা করতে চান, কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন না কোত্থেকে শুরু করবেন, কীভাবেই বা আলোচনা করবেন! সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করেছি বাচ্চাদের কয়েকটি সাধারণ জিজ্ঞাস্যের (যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যে কোনো জায়গার বাচ্চারাই করে) কীভাবে অভিভাবকরা তাদের মতো করে সদুত্তর জোগাবেন।
শরীর নিয়ে বাচ্চাদের কৌতূহল চিরকালীন। প্রতিনিয়ত তারা আবিষকার করতে থাকে চোখ, নাক, দাঁত, হাত... গোপনাঙ্গ। একটি ছেলে শিশু যখন প্রথম একটি নগ্ন মেয়েকে দেখে, প্রথমেই তার মনে প্রশ্ন জাগে ‘সুসু করে কী করে?’ মেয়েশিশু একই রকমভাবে ‘আব্বা, ছেলেটা সামনে দিয়ে পটি করে!’ আমরা বেশিরভাগ বাবা-মা-ই সাধারণত এসব বিস্ময়ের সমাধান করি না। কিন্তু সেটা অনুচিত।
  • বিব্রত না হয়ে উত্তর দিতে শুরু করুন। মনে কৌতূহল জাগলে বাচ্চারা যেমন করে হোক মেটাতে চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে ভুল তথ্য পেলে সাংঘাতিক বিপদ হতে পারে। তাই যার-তার কাছ থেকে ভুলভাল তথ্য থেকে বাঁচাতে নিজেই বাচ্চার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে শুরু করুন।
  • কখনো ‘এই বিষয়গুলো নিষিদ্ধ, আরোচনা করার যোগ্য নয়’ বলে ধামাচাপা দেবেন না।
  • কখনো কোনো প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হয়ে মারধর বা বকাবকি করবেন না। শান্ত মনে শুনে মজা করে উত্তর দিন।
  • যতটা সম্ভব বোঝান, তবে তা বাচ্চার বয়স বুঝে। আপনার বাচ্চা কতটা নিতে পারবে তা আপনিই সব থেকে ভালো বুঝবেন।
  • বাচ্চাদের সঙ্গে আলোচনার সময় আগে জেনে নিতে হবে সে কতটা জানে। অর্থাৎ আপনি প্রসঙ্গ তুলে কৌশলে তাকে আবার প্রশ্ন করে জেনে নেবেন যে সেই তথ্যের কতটুকু কী জানে (তা সে যত অকিঞ্চিৎকর প্রসঙ্গই হোক না কেন), আর ঠিক জানে কি না। কথার খেই ধরে বাকিটা জানিয়ে দিন কিংবা ভুল জানলে শুধরে দিন।
  • যতটা সম্ভব নিজের ও পরিবারের আর পাঁচজনের কথা টেনে উদাহরণ দিলে ওদের পক্ষে বোঝা আরো সোজা হয়ে যায় এবং সংকোচও কাটিয়ে উঠতে পারে।
যে পনেরোটি প্রশ্ন আপনাকে বিব্রত করে-
(১) রনির বোন হয়েছে, কিন্তু ওর সুসু করার জায়গা নেই মা!
মাঃ হ্যাঁ সোনা আছে, আছে। কিন্তু সেটা তোমার আর রনির মতো নয়। তোমরা ছেলে- ছেলেদের সুসুর জায়গাটা বাইরে থেকে দেখা যায়। তাই না?
ছেলেঃ হ্যাঁ মা, আমরা তো ধরতেও পারি।
মাঃ ঠিক তাই। কিন্তু রনির বোনের, রনির মায়ের, আমার-সব মেয়েদের এই জায়গাটা শরীরের মধ্যে থাকে, তাই দেখা যায় না।
(২) তুমি যে বললে ঠোঁটে কিসি করতে নেই, সপাইডারম্যান যে মেয়েটাকে ঠোঁটে কিসি করল?
বাবাঃ তুমি তো জানো হাত না ধুয়ে খেতে নেই। কেন বলো তো?
মেয়েঃ হাতে ময়লা থাকলে তা পেটে গেলে অসুখ করে।
বাবাঃ রাইট। কিসি করার সময়েও অন্যের মুখে থাকা কোনো ময়লা বা জার্ম তোমার পেটে চলে গেলে তোমার অসুখ করতে পারে। সপাইডারম্যান তো তার পাওয়ার দিয়ে সব কিছু জানতে পারে তাই ও জানত যে ওই মেয়েটার কোনো প্রবলেম নেই, সেই জন্যই ওর বন্ধুকে কিসি করেছিল। কিন্তু আমরা তো সপাইডারম্যানের মতো ম্যাজিক জানি না, তাই বুঝতে পারব না কোথায় জার্ম আছে। তাই আমরা গালেই কিসি করব। এই যেমন আমি তোমাকে কিসি দিই...।
মেয়েঃ যেমন আমিও তোমায় কিসি দিই, মাকে, মাসিমণিকে...
(বাচ্চার বয়স যদি এগারো-বারো হয় তাহলে বড় হয়ে ঠোঁটে চুমু খাওয়াটা যে অপরাধ নয় তা বুঝিয়ে বলতে পারেন। কেবল মুখের কথায় নয়, আচরণের মধ্য দিয়ে কিছু বক্তব্য বুঝিয়ে দেয়া দরকার। কখনো আপনারা স্বামী-স্ত্রী খুব স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরসপরকে সপর্শ করে, ঘনিষ্ঠ হয়ে শারীরিক সম্পর্কটা যে খুবই স্বাভাবিক, সিনেমা বা টেলিভিশনে আবদ্ধ নয়, সেটা বুঝিয়ে দিন।)
(৩) বাবা, এফএম-এ বলল কনডম ব্যবহার করুন! ওটা কী বাবা?
বাবাঃ কনডম এক ধরনের ওষুধ যা ছেলেরা বড় হলে ব্যবহার করতে হয়। ছোটদের কোনো কাজেই লাগে না। তাও জেনে রাখ-তুমি যখন বড় হবে, তোমার যখন ফ্যামিলি হবে...
ছেলেঃ ফ্যামিলি কেন হবে?
বাবাঃ সবারই হয়। ঠিক যেমন বড় একটা গাছের থেকে নতুন ডাল হয়, তাতে পাতা-ফল-ফুল সবই থাকে। তেমনই তুমি বড় হলেও তোমার আলাদা ফ্যামিলি হবে। আর এই ফ্যামিলি হলেই তোমার কাজে লাগবে কনডম। যখন বেবি চাইবে না তখনই কনডম ব্যবহার করতে হবে। তবে কনডম তোমাকে অনেক অসুখ থেকেও বাঁচাবে।
ছেলেঃ অসুখ থেকে বাঁচাবে মানে কী? অসুখ হলে তো ওষুধ লাগে।
বাবাঃ অসুখ হলে ওষুধ লাগে ঠিকই। তবে আবার চেষ্টা করলে অসুখ হওয়ার আগেই অনেক অসুখের হাত থেকে বাঁচা যায়। যেমন আমি আর তোমার মা মর্নিং ওয়াকে যাই, ব্লাড প্রেশার আর হার্টের অসুখ যেন না ধরে তার জন্য।
(বড় বাচ্চারা আরো গভীর প্রশ্ন করলে কনডমের ব্যবহার ও সুবিধাটা ধীরে ধীরে ব্যাখ্যা করতে পারেন।)
(৪) তোমার পেটে আমি কেন হলাম? বাবার পেটে হলাম না কেন মা?
মাঃ বেবি মায়ের পেটেই হয়। বেবি যে ঘরে হয় সেটা মায়ের পেটেই আছে। বাবার পেটে তেমন ঘর নেই...
মেয়েঃ কেন নেই মা?
মাঃ সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে। যেমন বাবার দাড়ি আছে আমার নেই, আবার আমার এতটা লম্বা চুল আছে, বাবার নেই...।
(৫) বেবি কী করে হয় মা?
মাঃ মা আর বাবা দুজনে মিলে বেবি চাইলে তবেই বেবি হয়। মায়ের পেটে ছোট একটা ডিম থাকে...
ছেলেঃ আমরা যে ডিম খাই, সেই ডিম?
মাঃ সেই রকমই, তবে তা চোখে দেখা যায় না। আর বাবার পেটে থাকে ছোট ছোট সুতার মতো...।
ছেলেঃ ওগুলো দেখা যায়?
মাঃ না বাবা, ওগুলোও চোখে দেখা যায় না। মা আর বাবা বেবি চাইলে তবেই বাবার কাছ থেকে ওগুলো মায়ের পেটে ওই ঘরে যায় আর বেবি তৈরি হতে থাকে।
(৬) ভাইয়ের মতো তুমিও কেন ডায়াপার পরো মা?
মাঃ ভাই ডায়াপার কেন পরে বলো তো?
ছেলেঃ সুসু করে ফেললে জামা-কাপড় ভিজে যাবে না বলে।
মাঃ ঠিক তাই, সুসু করে ফেলে। ও খুব ছোট বলতে পারে না তাই। আমি তো তাই নই-আমি যেটা পরি সেটা ডায়াপার নয়, ওরকমই আর এক ধরনের ন্যাপকিন। মেয়েরা বড় হলে তাদের শরীর থেকে কিছু রক্ত বেরিয়ে যায়...
ছেলেঃ কী করে বেরোয়? কেটে যায়?
মাঃ না, সুসুর মতোই বেরোয়। সেই জন্যই ন্যাপকিন পরতে হয়।
ছেলেঃ রোজ রক্ত বেরোয় মা?
মাঃ না বাবা, তা হলে মরে যাব। প্রতি মাসে একবার, চার-পাঁচদিনের জন্য এটা হয়।
(আপনার যদি মেয়ে সন্তান থাকে তা হলে আট-নয় বছর বয়স হলে এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা উচিত। কারণ অচিরেই তারা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবে। ছোট ছেলেদেরও ব্যাপারটার স্বাভাবিকত্ব ব্যাখ্যা করা দরকার।)
(৭) ভাইয়া তোমার থেকে দুধু খায় কেন? বাবার থেকে খায় না কেন?
উত্তরঃ ভাইয়া যখন পেটে বড় হচ্ছিল তখনই বেবিকে খাওয়ানোর জন্য দুধু তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেবি পেট থেকে বেরোনোর পর দুধুধু বেরোতে শুরু করে। ভাইয়া তো বাবার পেটে ছিল না, তাই ওখানে দুধু তৈরিও হয়নি। (বাচ্চা যদি প্রশ্ন করে বেবি কেন বাবার পেটে হয় না তা হলে চার নং প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারেন।)
(৮)  ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র-সিটি মানে জানি মা, সেক্স মানে কী?
মাঃ আমি যখন কলেজে পড়ি তখন তোমার বাবার সঙ্গে আমার একটা বিয়ে বাড়িতে দেখা হয়। খুব ভালো লেগেছিল। বাবাও তখন বলেছিল ও আমাকে খুব ভালোবাসে।
মেয়েঃ আমি কোথায় ছিলাম?
মাঃ তুমি তখনো জন্মাওনি সোনা।
মেয়েঃ কেন?
মাঃ আমাদের তো তখনো বিয়ে হয়নি।
মেয়েঃ বিয়ে হলেই বেবি হয়?
মাঃ বাবা-মা চাইলেই বেবি হয়।
মেয়েঃ সেক্স মানেটা তাড়াতাড়ি বল।
মাঃ সেটাই তো বলছি। আমরা যখন দুজন-দুজনকে খুব ভালোবাসলাম তখন বাবা আমাকে কত আদর করল, আমি বাবাকে কিসি করলাম...
মেয়েঃ সে তো এখনো করো।
মাঃ করিই তো, এখনো যে ভালোবাসি! আর ভালোবেসে বাবা-মা নিজেদের আদর করে, কিসি করে একসঙ্গে থাকলে, বেবি চাইলে সেটাকে সেক্স বলে।
(আপনি কীভাবে এটা বোঝাবেন তা আপনার সন্তানের বয়সের ওপর নির্ভর করে। দশ-এগারো বছরের বেশি হলে ওকে সন্তান হওয়ার ব্যাপারটাও বুঝিয়ে বলতে পারেন।)

(৯) হিজড়ারা ছেলে না মেয়ে?
বাবাঃ কোনোটাই নয়। আসলে আমি বা তুমি যেমন ছেলে, মা বা বোনু যেমন মেয়ে তেমনভাবে ওরা ছেলে বা মেয়ে নয়। আসলে আমরা তো সুসু জায়গা দেখেই বুঝি যে বেবিটা ছেলে না মেয়ে, হিজড়াদের ক্ষেত্রে অনেক সময় সেটা বোঝা যায় না। মায়ের পেটে থাকার সময়েই কোনো সমস্যা হলে এই রকমের গণ্ডগোল দেখা দেয়। তাই বড় হওয়ার পরও ওরা কখনো ছেলেদের মতো কিছু কাজ করে, কখনোবা মেয়ে-মেয়ে হয়ে থাকে।
(১০) এইডস কী অসুখ বাবা?
বাবাঃ এইডস খুব খারাপ একটা অসুখ।
ছেলেঃ খুব রক্ত পড়ে?
বাবাঃ না শরীরের মধ্যে হয়, প্রথমদিকে তেমন বোঝাও যায় না।
ছেলেঃ তা হলে খারাপ কেন?
বাবাঃ বুঝতে পারার আগেই অনেকটা বেড়ে যায়। অসুখ আটকে রাখার যে স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে সেটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই সব সময় সর্দি-কাশি-পেট খারাপ হতে থাকে...
ছেলেঃ চ্যাবনপ্রাশ খায় না কেন?
বাবাঃ ওই যে বললাম খারাপ অসুখ। চ্যাবনপ্রাশ বা অন্য কোনো ওষুধেও সারে না।
ছেলেঃ কী করে এমন খারাপ অসুখটা হয়?
বাবাঃ অনেক রকমভাবে হতে পারে- মায়ের থাকলে বেবির হতে পারে, অনেক সময়েই আমাদের ব্লাড নিতে হয়...
ছেলেঃ সুমিত কাকার অ্যাক্সিডেন্টের সময় যেমন তুমি রক্ত দিয়েছিলে?
বাবাঃ হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। আমাদের যদি এইডস থাকত, তা হলে রক্ত নেয়ার পর সুমিত কাকারও হয়ে যেত।
ছেলেঃ আর?
বাবাঃ এইডস আছে এমন মানুষ যদি কেউ বিয়ে করে, এক সঙ্গে থাকে, বেবি হয় তা হলে তারও এইডস হতে পারে।
(১১) বাবা জানো, আজ স্কুলের টয়লেটে দুটো দাদা খুব নিজেদের আদর করছিল...
বাবাঃ তা তো করতেই পারে। আমি তোমাকে করি না?
ছেলেঃ না বাবা ওরকম আদর নয়...
বাবাঃ তা হলে কেমন আদর?
ছেলেঃ যেমন সিনেমায় গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডরা করে।
বাবাঃ ওই দাদা দুটোও হয়তো ফ্রেন্ড।
ছেলেঃ আমারও তো অনেক ছেলেফ্রেন্ড আছে বাবা, আমরা কিন্তু ওই রকম করি না।
বাবাঃ তোমাদের ইচ্ছা হয় না হয়তো, কিন্তু কারো কারো এই রকমের ইচ্ছা হতে পারে। ওটা নিয়ে একদম চিন্তা করবে না!
(প্রসঙ্গত জানাই, গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ব্যাপারটা খুব ছোটবেলা থেকেই সাধারণভাবে মজা করে কথা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। নিজেদের নিয়ে কিংবা কোনো কাছের মানুষরা আগে প্রেমিক ছিলেন, পরে বিয়ে করেছেন-এই উদাহরণ দিয়ে বোঝালে ওদের সংকোচও কেটে যাবে)।
(১২) রেপ কী করে করতে হয় মা?
মাঃ সেটা আমি ঠিক জানি না। আর কখনো এই কাজটা করতে যাওয়া উচিত নয়। খুব খারাপ কাজ এটা-
মেয়েঃ খারাপ কেন?
মাঃ পৃথিবীতে অনেক কাজই খারাপ- মারামারি করা, কাউকে গালাগালি দেয়া, চুরি করা, রেপ করা...। তাই ওগুলো নিয়ে একদম ভেবো না।
(১৩) এইচআইভি স্কুলের কত উঁচু ক্লাস বাবা?
বাবাঃ ফাইভ-সিক্সের মতো এটা কোনো ক্লাস নয়। এটা একটা ভাইরাসের নাম।
মেয়েঃ ভাইরাস কী বাবা?
বাবাঃ যে কোনো অসুখ ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া এই সব থেকে হয়?
মেয়েঃ এগুলো কী পোকা?
বাবাঃ পোকার মতো, তবে খুব ছোট, চোখে দেখা যায় না এমন কিছু জিনিস, যা শরীরের মধ্যে ঢুকে অসুখ বাধায়।
মেয়েঃ ঢোকার আগে ধরে ফেলতে পারি না?
বাবাঃ না, কারণ চোখে দেখা যায় না এগুলোকে। তবে নিজেরা সাবধানে থাকলে অনেক অসুখই আটকানো যায়।
(১৪) বোনু কী করে পেট থেকে বেরোল, মা? তোমার পেটে তো কাটা নেই!
মাঃ বোনু পেটে ছিল, তবে পেট কেটে বেরোয়নি। টমির বেবি কি পেট কেটে হয়েছে।
ছেলেঃ এ মা ডগির তো পটি করার জায়গা দিয়ে বেরিয়েছিল...!
মাঃ না বাবা, তা নয়। দেখে মনে হয় যদিও তাই, আসলে ওটা বেবি হওয়ারই জায়গা। মায়েদেরও ওইরকম একটা বেবি হওয়ার জায়গা আছে।
ছেলেঃ সুসু করার জায়গা দিয়ে?
মাঃ না, সুসু আর পটির মাঝে আর একটা রাস্তা আছে যেখান দিয়ে সময় হলে বেবি বেরোয়।
ছেলেঃ খুব লাগে?
মাঃ একটু লাগে। তবে বোনুকে তো পাওয়া যায়!
(মেয়ে সন্তান হলে ধীরে ধীরে তাকে এই প্রসঙ্গে ঋতুচত্রের কথাটাও বলে নিতে পারেন। তা হলে ঋতু কীভাবে হয় সেটাও ওরা সহজে বুঝে যাবে।)
(১৫) অর্পণা, সুদীপ্ত সবারই বোন আছে বাবা, আমার কেন ভাই?
বাবাঃ ভাই বা বোন হওয়াটা আমাদের ইচ্ছার ওপর নয় সোনা। তোমায় তো আগে বুঝিয়েছি বেবি কী করে হয় (আপনি না বলে থাকলে ৫নং প্রশ্ন ও উত্তর পড়ে নিতে পারেন)। এবারে বলি, মায়ের পেটে যে ডিম থাকে সেটার নাম x ক্রোরোমোজম, বাবার পেটের মধ্যে থাকা জিনিসগুলোতে x+y-এই দু ধরনের ক্রোমোজমই থাকে। মায়ের ডিমের x ক্রোরোমোজমের সঙ্গে বাবার  x ক্রোরোমোজমটা মিশলে হবে মেয়ে আর বাবার y ক্রোমোজম মিশলে হবে ছেলে।
ছেলেঃ এটা কী অংক?
বাবাঃ একদম সোজা। x+x মেয়ে আর x+y ছেলে।
যা করতেই হবে
বাচ্চা, তা সে ছেলেই হোক কিংবা মেয়ে যতটা সম্ভব চোখে-চোখে রাখবেন। অনেকে ভাবেন মেয়ে সন্তান হলেই বুঝি বিপদ বেশি। এই ধারণা একেবারেই ভুল! ছোট ছেলেরাও কোথাও কোথাও খুব কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়।
বাচ্চাকে কখনোই কোনো অচেনা পরিস্থিতিতে ছাড়বেন না। যেমন সদ্য পরিচিত স্কুলের বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি। যেতে হলে নিজে সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
স্বল্প পরিচিত ড্রাইভার বা কাজের লোক, এমনকি পড়শি বা স্বল্প পরিচিত মানুষের সঙ্গে বাচ্চাকে ছাড়বেন না।
বাচ্চাকে বোঝান যে কোনো অস্বাভাবিক, অসংযত আচরণ (যে আচরণে তার অস্বস্তি হয়) কেউ করলে যেন সঙ্গে সঙ্গে এসে বলে। কেউ ভয় দেখালেও ভয় পেয়ে যেন চুপ করে না থাকে।
বাচ্চাকে যখন বোঝাবেন তখন ওকে ভয় পাইয়ে দেবেন না। এমন যেন সে না ভেবে বসে যে পৃথিবীর সব বড় মানুষই এক-একটা পিশাচ। এমনভাবে বোঝাতে হবে যাতে সে ভালো-খারাপ সপর্শের বা আচরণের সূক্ষ্ম তফাৎটা ধরতে পারে এবং এই কঠিন কাজটা আপনাকে করে ফেলতেই হবে।
সব সময়ই পজিটিভভাবে সব প্রসঙ্গ আলোচনা করবেন। বারবার বুঝিয়ে দিতে হবে যে কোনো প্রসঙ্গেই লুকিয়ে রাখার মতো কিছু নেই। তবে অন্য কাউকে না বলে খোলামেলা আলোচনা মা-বাবার সঙ্গে যেন তারা সব সময় করে নেয়।
আপনাকে যে কোনোভাবে সন্তানের একান্ত বিশ্বাসের জায়গাটা অর্জন করতে হবে এবং সেটা করতে হবে মজা করে, গল্প করে, আলোচনা করে।
বাচ্চার সঙ্গে আচরণের সময় তাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করলে তাতে তাদের অনেক আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সব সময় ‘ও বাচ্চা, কিছু বুঝবে না’ গোছের আচরণ করা উচিত নয়।
সাবর্ণী দাস
http://www.sunagro.info/

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More