Friday, July 8, 2011

প্রাইমারি স্কুলে সেক্স এডুকেশনের লাভক্ষতি

বিলাতের প্রাইমারী স্কুলের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের সিলেবাসে সেক্স এডুকেশন বা যৌনশিক্ষার অন্তর্ভূক্তি একটা অবিশ্বাস্য খবর। কিন্তু বাস্তবে তাই হতে যাচ্ছে। বিলাতের বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপ এবং বিবেকবান বুদ্ধিজীবীদের আপত্তি সত্ত্বেও বর্তমান সরকার প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করতে যাচ্ছে। সরকার প্রকাশ্যে বলছে, টিন-এইজার প্রেগন্যান্সি প্রতিরোধের জন্যেই প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষা চালু হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি তাই? 

বিলাতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা টিন-এজার মেয়েদের অন্তসত্ত্বা হবার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বলাবাহুল্য বিবাহ বহির্ভূত অবস্থায়-ই এ সকল মেয়ে অন্তসত্ত্বা হচ্ছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বৃটেনে টিন-এইজ প্রেগন্যান্সির হার অনেক বেশি। এ ব্যাপারে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমরা এগিয়ে আছি। অথচ এ দেশে তুলনামূলক হিসেবে জন্মনিরোধক বটিকার ব্যবহার অনেক বেশি। জন্মনিরোধের অন্যান্য পন্থাও এখানে সর্বত্র সহজলভ্য। সাম্প্রতিক এক সার্ভে অনুযায়ী বৃটেনের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী শতকরা ২ দশমিক ৯ টি মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। এ হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দশমিক ৭৬, ফ্রান্সে দশমিক ৭৫ এবং জাপানে দশমিক ৫৯ মাত্র। 

এ দেশের আইন অনুযায়ী টিন-এইজার ছেলে বা মেয়ে কারো-ই ১৮ বছর না হলে বিয়ে করার অধিকার নেই। মা-বাবা যদি ১৬ বছর হবার পূর্বে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন তা হলে আইন ভঙ্গের দায়ে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মেয়েদের বিয়ে করার বয়স ১৮ বছর হলেও ইমিগ্রেশন আইনের ধারা মতে ২১ বছর না হলে তারা স্বামীকে এ দেশে নিয়ে আসার জন্য আবেদন করতে পারে না। ইকুয়াল অপরচুনিটির দেশে স্থানীয় বাসিন্দদের জন্য এক আইন এবং বহিরাগতদের জন্য ভিন্ন আইন। এটা কি বর্ণবৈষম্য নয়? 
এ দেশে প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষা প্রদানের দাবি অনেক পুরানো প্রসঙ্গ। শুধু লেবার পার্টি নয়, লিবারেল ডেমোক্রেট দলের পক্ষ থেকে ২০০৩ সালে ৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের যৌনশিক্ষা দেয়ার দাবি উত্থাপিত হয়েছে। তাদের মতে যৌন হয়রানী, ড্রাগ এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়া প্রতিরোধে এটাই সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা। তবে টিন-এইজারদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টা-ই তারা বেশি আলোচনায় টেনে আনছেন। রক্ষনশীল মহলের আপত্তির কারণে এতদিন বিষয়টা আটকে ছিল। এখন মনে হচ্ছে সরকারের যারা নীতি নির্ধারক তারা এ ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

টিন-এইজার মেয়েদের অধিকমাত্রায় আন্তঃসত্ত্বা হবার ঘটনায় উদ্বিগ্ন কতিপয় চিন্তাবিদ এর আসল কারণ অন্বেষণ না করে নিজেরা একটা কারণ তৈরি করেছেন। বর্তমান লেবার সরকার এ সকল মাথামোটা থিংক ট্যাঙ্কারের তৈরি কারণকে টিন-এইজারদের আন্তঃসত্ত্বা হবার সত্যিকার কারণ বলে ধরে নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে প্রাইমারী স্কুলের ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূলক ভাবে যৌনশিক্ষা প্রদান করতে হবে। 
শিশু বয়স থেকে যৌনশিক্ষা দিলে টিন-এইজারদের অন্তঃসত্ত্বা হবার হার কমে যাবে, এটা একটা হাস্যকর দাবি। এ ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের সাথেও তা সাযুজ্যপূর্ণ নয়। যে সকল অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছে তাদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের চেয়ে ছোট মেয়ের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য। এ দেশে ১১ এবং তদুর্ধ বয়সের ছেলেমেয়েরা সেকেন্ডোরী স্কুলে যায়। সেকেন্ডারী স্কুলে অনেক দিন থেকেই বাধ্যতামূলক ভাবে যৌনশিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। জন্মনিরোধক বটিকা বা অন্যান্য উপকরণের ব্যবহারও এ দেশে ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেক গুণ বেশি। 

গত বছর সাউথাম্পটন ইউনিভার্সিটির এক জরিপে দেখা গেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বৃটেনের টিন-এইজার মেয়েদের উন্নতমানের জ্ঞান রয়েছে। জরিপ অনুযায়ী প্রতি ১০ জনের ৭ জন টিন-এইজার মর্নিং-আফটার পিলের ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল রয়েছে। সুতরাং প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষা দেয়া হলে টিন-এইজ প্রেগন্যান্সি কমে যাবে বলে যারা প্রচার করছেন তাদের এ দাবি সঠিক নয়। 
নীতিগত ভাবে আমরা ছেলেমেয়েদের যৌন বিষয়ে শিক্ষাদানের পৰক্ষ। মানব জীবন এবং মানব সমাজের জন্যে মানুষের যৌনজীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কোনভাবেই আমরা যৌনশিক্ষাকে উপেক্ষা বা অবহেলা করতে পারি না। আমরা জানি, মানুষের মতো পশুর মধ্যেও যৌন আকাঙ্খা রয়েছে। তবে পশুর এবং মানুষের যৌন-জীবন সমান নয়। পশুর যৌন-আকাঙ্খা মেটানোর জন্য যাচাই-বাচাই করার প্রয়োজন পড়ে না। তারা যার সাথে যখন ইচ্ছা মিলিত হতে পারে। কিন্তু মানুষকে এ ব্যাপারে একটা বিশেষ নিয়মের আওতায় চলতে হয়। ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদি, হিন্দু ও বৌদ্ধসহ পৃথিবীর সকল ধর্মে মানুষের যৌনজীবন সম্পর্কে বিধিবদ্ধ বিধান রয়েছে। সকল ধর্মই বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ সকল বিধান সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েরা পারিবারিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার আওতায় অবহিত হয়। ইসলাম ধর্মের কুরআন-হাদীস এবং ফেকাহ শাস্ত্রে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। কিন্তু যৌনশিক্ষার নামে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের অবাধ যৌন স্বাধীনতা বা বক্তি-স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা শিক্ষা দেয়াকে আমরা সমর্থন করতে পারিনা। সরকার আসলে প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষার অজুহাতে এ সব জিনিসই শিক্ষা দিয়ে বিশৃঙ্খল সমাজকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে যাচ্ছে। এটা কোন অবস্থায়ই মেনে নেয়া যায় না। 

আদমশুমারীর হিসাব মতে বিলাতের অধিকাংশ মানুষ খৃষ্টান ধর্মমতের অনুসারী। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় খৃষ্টধর্মের কোন আধিপত্য নেই। এমন কি স্কুল বা কলেজে যারা আরই বা রিলিজিয়াস এডুকেশন শিক্ষা দেন তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় অথবা এগনষ্টিক বা সংশয়বাদী। বর্তমানে বৃটেনের সেকেন্ডারী স্কুলে সেলফ এন্ড সোসাইটি বা পিএসএইচই-এর যারা শিক্ষক তারা-ই সাধারণতঃ যৌনশিক্ষা প্রদান করেন। মানুষের যৌন জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্ম যে নির্দেশনা প্রদান করেছে স্কুলের যৌনবিদ্যার আওতার মধ্যে তা নেই। 

স্কুলগুলো কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয় যে বৃটেনের অবাধ যৌন স্বাধীনতা থেকে তা দূরে থাকতে পারবে। সমাজ ও স্কুলের পরিবেশের সাথে শিৰকদের মানসিকতা যোগ হবার ফলে ধর্মীয় বিধি-নিষেধের ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক ধরণের উন্নাসিকতা সৃষ্টি হচেছ। সম্প্রতি হমোফোবিয়া প্রতিরোধের নামে অনেক স্কুল ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে রীতিমত জেহাদ শুরু করেছে। বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের পৰক্ষ এ ভাবে ক্যাম্পেইন চালালে টিন-এইজ প্রেগন্যান্সি বৃদ্ধি পাবে, এতে অবাক হবার কিছু নেই। 
আমাদের মতে বৃটেনে টিন-এইজারদের অধিক হারে অন্তঃসত্ত্বা হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে যৌন বিষয় শিক্ষা দেয়ার নামে সেকেন্ডারী স্কুলে লাগামহীন বা অনিয়ন্ত্রিত যৌন বিষয়ক আলোচনা। টিন-এজার ছেলেমেয়েদের সাথে খোলামেলা ভাবে যৌন বিষয়ক আলোচনা করলে তাদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য। এর সাথে পাশ্চাত্য সমাজের অবাধ যৌন স্বাধীনতা, ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে অবাধ যৌনাচার, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উলঙ্গ প্রচারনা, পারিবারিক জীবনে ধ্বস ইত্যাদিও এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। অপর দিকে সোশ্যাল সার্ভিসের বাড়াবাড়ি মূলক খবরদারির কারণে ছেলেমেয়েদের উপর শিক্ষক এবং পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই কমে আসছে। ফলে ছেলেমেয়েরা বিদ্রোহী এবং বেপরোয়া হয়ে গড়ে উঠছে। এমনি অবস্থায় সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষা প্রদান শুরু হলে দেশে টিন-এইজার মায়ের সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে আমারা আশঙ্কা করছি। 

বিলাতের প্রায় সকল ধর্মীয় গ্রুপ প্রাইমারী স্কুলে যৌনশিক্ষার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। কিন্তু শুধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সরকারী সিদ্ধান্ত রোধ করা যাবেনা। দলমত নির্বিশেষে এর প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। আশার বিষয় যে মুসলিম কমিউনিটির কয়েকটি গ্রুপ এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। মুসলিম কমিউনিটির হাজার হাজার প্রাইমারী স্কুলগামী ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের ভবিষ্যত জীবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্যে আবশ্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবরা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাকতে পারেন। তবে শুধু মুসলমানদের এবং শুধু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চেষ্টায় আমরা সফল হতে পারবো না। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এর সাথে জড়িত করতে হবে। বিলাতের সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা কোন ধর্মে বিশ্বাস না করলেও সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ সংরক্ষণের ব্যাপারে আন্তরিক। তাদেরকেও জনমত গঠনের কাজে অংশীদার করতে হবে। টেলিভিশনের টক শ, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিলাতের সর্বত্র এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। 

টাওয়ার হ্যামলেটস এবং নিউহাম এলাকার মতো মুসলিম বা এশিয়ান অধ্যুষিত বরার বাসিন্দাদের এ ব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে যারা এমপি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তাদের সকলের কাছে আমাদের যেতে হবে। সকল দলের এমপি প্রার্থীর নিকট থেকে এর বিরুদ্ধে কথা বলার অঙ্গীকার আদায় করতে হবে। 
সব শেষে একটি ছোট্র কথা বলে আলোচনার ইতি টানতে চাই। বিলাতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বা কারিকুলাম আমাদের ছেলেমেয়েদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে কতটুকু উপযোগী সে ব্যাপারে শিক্ষাবিদদের মধ্যে প্রবল বিতর্ক রয়েছে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং ইউরোপের বর্তমান প্রজন্মের সাথে বিলাতের বর্তমান প্রজন্ম কি শিক্ষা, দক্ষতা বা যোগ্যতায় প্রতিযোগিতা করে বিজয়ী হতে পারবে? বর্তমান শতাব্দী গত শতাব্দী থেকে অনেক বেশি দ্রতগামী এবং প্রতিযোগিতামূলক। বিলাতের প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী স্কুলে বিজ্ঞান, অংক এবং আইসিটি শিক্ষার জন্যে যে সময় নির্ধারিত আছে তা কি যথেষ্ট? এ সময় থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে সে সময় যৌনশিক্ষার লেসনে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক - তাও বিবেচনা করা দরকার। প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ যে রকম খাওয়া-পরার জ্ঞান অর্জন করে তেমনি কিছুটা যৌনশিক্ষাও লাভ করে। যৈবিক জীবন-যাপনের জন্যে এর পর যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তা তারা পরিবার এবং সমাজ থেকে লাভ করতে পারে। আমাদের মতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষার জন্যে নির্ধারিত সময় কেটে নিয়ে সে সময় যৌন শিক্ষার জন্যে ব্যয় করা বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ নয়।
 from internet

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More