Thursday, July 21, 2011

নারীর দেহ-মন


ডা. জাকারিয়া সিদ্দিকী
নারীর দেহ আর মন। শিল্পীরা কতকাল ধরে রঙের তুলিতে দেহ পোস্টার অঙ্কন করছেন আর কবি-সাহিত্যিকরা দুর্বোধ্য মনের রহস্য জানার অভিযানে নিমগ্ন আছেন। নারী নিজের কাছেই অনেকটা অবহেলার মতো। তার দেহ-মনের অনেকগুলো ব্যাপারই রহস্যে ঢাকা আর কুয়াশায় ঘেরা। চিকিৎসা বিজ্ঞান নারীর দেহ-মনের এত রহস্য, অসপষ্টতা আর কুয়াশার মাঝে সূক্ষ্ম হরমোনের মারপ্যাঁচে নিয়ন্ত্রিত ছন্দময়তার আভাস পেয়েছেন। প্রকৃতি এতকাল নারীকে চাঁদের সাথে তুলনা করেছিল। কি আশ্চর্য! একদম চাঁদের পূর্ণিমা-অমাবস্যার মতো নারীর দেহ শারীরবৃত্তীয়তা আর মনস্তত্ত্বের মর্জি, মেজাজ চক্রিক ধারাতে আবর্তিত হয়। এ চক্রের আবর্তনে একই নারী কখনো শান্তস্থির আবার কখনো অস্থির, চঞ্চল, কখনো উদ্বিগ্ন আর কখনো বিষণ্ন।
প্রকৃতি নারীর দেহ-মনকে একটা ছন্দময়তার ধাঁচে তৈরি করে দিয়েছে। এ ২৮ দিনের ছন্দময়তার সুসপষ্ট বহিঃপ্রকাশ হলো নির্দিষ্ট সময়ান্তে স্রাবক্ষরণ ঘটা। বয়ঃসন্ধি থেকে একদম ৪৫-৫০ বছর বয়সকাল অবধি বহাল থাকে এ ছন্দময়তা। প্রথম ঋতুস্রাবের নাম রজোদর্শন আর সমাপ্তির নাম রজঃনিবৃত্তি। উল্লেখ্য, ২৮ দিন একটা গড় হিসাব, তাতে বিভিন্ন মহিলার বেলায় এমনকি একই মহিলার বেলাতে বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের হয়। সামান্য ব্যতিক্রম ঘটলেও মৌলিক শর্ত এক আর অভিন্ন থেকে যায় সবার বেলায়।
কেমন যাবে শরীর-মন
প্রথম সপ্তাহ
১. নখের শুষকতাঃ প্রথম সপ্তাহে আপনার দেহের নখ শুষক থাকে আর তা সহজে ভেঙে যেতে পারে বিশেষ করে সামনের দিকের অংশে ক্র্যাক দেখা দিতে পারে। দেহে এস্ট্রোজেনের ঘাটতির কারণে এটি ঘটে থাকে। রূপসচেতন মহিলাদের জন্য দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দিনে দুই থেকে তিনবার পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে পারেন।
২. ব্যায়ামের উপযোগী সময় ব্যায়ামঃ মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জিম পিভোরনিক বলেন- যে সমস্ত মহিলা তাদের গতানুগতিক থেকে বেশি পরিশ্রমের বাড়তি ব্যায়াম করতে চান, তাদের জন্য এটিই উৎকৃষ্ট সময়। দেহে প্রজেস্টেরন সেক্স হরমোন কম থাকায় তাপমাত্রা বেশি বেড়ে যাওয়ার কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই।
৩. বারবার বাথরুমঃ এটা মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নয়। প্রস্রাবের জন্য বারবার বাথরুমে যেতে হয়। তবে কোনো কারণ নেই। কোনো ডায়াবেটিসের ঝক্কি-ঝামেলা নয়। দেহের প্রজেস্টেরন আর এস্ট্রোজেন হরমোন নেই, এ হরমোনদ্বয়ের প্রভাবে দেহে এতকাল যে বাড়তি মাত্রার পানি জমা হয়েছিল তা প্রস্রাব আকারে বের হয়ে আসতে থাকে। প্রাক-ঋতুস্রাব সিনড্রম কথিত দুঃসহ দিনগুলোতে দেহের ফোলা ফোলা ভাবের কারণই ছিল বাড়তি মাত্রার পানির উপস্থিতি। কেবল মূত্রত্যাগ নয়, এ সময়ে মুখের ভেতরে লালার ক্ষরণও বেড়ে যেতে দেখা যায়।
স্বাস্থ্য ঝামেলা
আমেরিকার জার্নাল অব ফ্যামিলি প্র্যাকটিসে এক গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৮ দিনের ছন্দময়তায় এ সপ্তাহটিতে মেয়েদের ডাক্তারদের শরণাপন্ন হওয়ার হার প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। গবেষক হফম্যান এলেন বলেন-এ সময়ে মহিলারা সর্দি, জ্বর আর ফ্লুতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকবে, এর কোনো সুসপষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি।
এই তো সময়
আপনি যদি রিলাক্সেশন মেডিটেশন করে থাকেন তাহলে এই তো সময়, মেয়েরা এ সময়ে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ থাকেন। এ কারণে এ মননচর্চা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণময়তা পায়।
তবে সাবধান
এ সময়ে অ্যালার্জির ঝামেলা বেড়ে যায়, এমনকি অ্যালার্জির প্রকাশ ঘটে অন্য সময়ের চেয়ে রূঢ় মাত্রায়। নানা কসমেটিক সামগ্রী যদি প্রথম ব্যবহার করতে চান তাহলে অ্যালার্জির বাড়তি ঝুঁকি থেকে যায় এ সপ্তাহে। সুতরাং সাবধান হওয়া চাই।
পুরুষের কাছাকাছি
পুরুষ আর নারীর ক্ষমতার পার্থক্যের অনেকগুলোর মাঝে একটি হলো সেপসিয়াল বা স্থানসংক্রান্ত ক্ষমতা। এতে একদম সুসপষ্ট লিঙ্গিক পার্থক্য দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো ঋতুমাসের এ প্রথম সপ্তাহে তা অনেক পরিমাণে কম থাকে। কারণ মহিলা দেহে এ সময়ে এস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন থাকে না, যা এ ক্ষমতার উৎকর্ষতা কমিয়ে দেয় মেয়েদের বেলায়।
যদি আপনার বাতের সমস্যা থাকে
যারা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন তাদের বেলায় সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ফীতি আর ব্যথা এসব উপসর্গ ঋতুমাসের প্রথম সপ্তাহে অন্য সপ্তাহের চেয়ে তীব্রতর হয়ে থাকে। কারণ দেহে প্রজেস্টেরন থাকে না। প্রজেস্টেরন সেক্স হরমোনের একটা প্রদাহ প্রতিরোধক ভূমিকা বিদ্যমান।
খিঁচুনির বাড়তি ঝুঁকি
যারা মৃগী বা এপিলেপসি রোগে ভুগছেন তাদের পিরিয়ড চলাকালে আর পিরিয়ডের সূচনাকালে খিঁচুনির বাড়তি ঝুঁকি থাকে। প্রজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতি এর কারণ। কারণ এটির একটা খিঁচুনি প্রতিরোধক ভূমিকা থাকে। এস্ট্রোজেন অবশ্য এখানে ঠিক উল্টো ভূমিকা রাখে, তা খিঁচুনির প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
দ্বিতীয় সপ্তাহ
যদি অ্যালকোহলের ইচ্ছা থাকে
যদি আপনার মনে অ্যালকোহল নেয়ার পরিকল্পনা থাকে, তবে তা দ্বিতীয় সপ্তাহে করাটাই সর্বোত্তম। নেদারল্যান্ডে পরিচালিত এক গবেষণায় এটি দেখা গেছে। কোনো এক অজানা কারণে ঋতুমাসের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময়টিতে আমাদের দেহ অনেক বেশি অ্যালকোহল সয়ে নিতে পারে।
দুর্বলবোধ হতে পারে
ইংল্যান্ডের গবেষক ডা. সুসান কিল্পি দেখেছেন দেহের এস্ট্রোজেন হরমোন মাত্রার একদম শীর্ষে ওঠার পরের কয়েকদিন দুর্বলবোধ হতে পারে। এ সময়ে সত্যি সত্যিই মাংসপেশির ক্ষমতা কমে আসে। কারণ একটাই, দেহের এস্ট্রোজেন মাত্রা কমে আসে।
সুবর্ণ সময়
এমনিতেই মেয়েদের সুরেলা কণ্ঠ, বাচনভঙ্গিমা, ভাষার সমৃদ্ধি সবদিক থেকে পুরুষ অপেক্ষা মহিলারা এগিয়ে। ওভিউলেশনের নিকটবর্তী সময়ে বাচনক্ষমতা, উৎকর্ষতা একদম তুঙ্গে যেতে দেখা যায়। কারণ ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন আর লিউটিনাইজিং হরমোন এ সময়ে তুঙ্গে থাকে।
সুন্দর ত্বক
মাসের এ দ্বিতীয় সপ্তাহটিতে আপনাকে প্রকৃতিগতভাবে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। বাড়তি এস্ট্রোজেনের কারণে ত্বকের কোলাইজেন আর পানির পরিমাণ সুস্থিত হয়, যে কারণে ত্বকের কমনীয়তা আর ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যায় অনেক পরিমাণে।
শ্রবণ উৎকর্ষতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার ইভানস ভিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন প্রফেসর ক্যাবেলিন জো-এর অভিমত, রক্তে উচ্চমাত্রার এস্ট্রোজেন চলমান থাকার কারণে মেয়েরা এ সময়ে কেবল ভালো শুনতেই চায় না, তারা বেশি ফ্রিকোয়েন্সি সম্পন্ন শব্দও শুনতে পায়। এ কারণে আশপাশের পরিবেশ তাদের কাছে নতুন আঙ্গিকে প্রতিভাত হতে পারে।
আপনার সেক্স
জার্মানিতে চালানো সমীক্ষণে দেখা গেছে, মেয়েদের যৌন তাড়নাবোধ সবচেয়ে বেশি থাকে এ সময়ে। এ সময়ে মেয়েরা নানা সেক্সুয়াল ইমেজের প্রতি অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি মাত্রায় প্রতিক্রিয়ান্বিত হয়। সেক্সে চরমপুলক সচেতনতা অন্য সময়ের তুলনায় একশ ভাগ বেশি থাকে। যেন এই তো সময়! এ সময়ে ওভিউলেশন ঘটে দেহে ডিম্ব বর্তমানে। মিলন হলেই প্রজননের সম্ভাবনা। এ যেন প্রকৃতিরই এক সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা। উল্লেখ্য, ডিম্বাণু মাত্র একদিন কার্যক্ষম থাকে, এর পরেই নিষিক্রয় হয়ে যায়।
প্রেমিকার দেহের গন্ধ
গন্ধ মনের যৌনতায় ইতর প্রাণীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না রাখলেও এর আবেদন একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। গবেষণায় প্রকাশ, পুরুষ দেহের ঘর্মনের প্রতি সংবেদনশীলতা ঋতুস্রাবকাল অপেক্ষা ওভিউলেশনকালে ১০ হাজার গুণ বেশি। সুতরাং পার্থক্য একদম সুসপষ্ট বলা চলে।
সৃজনশীল
আপনি যদি সৃজনশীল পেশার সাথে যুক্ত থাকেন যেমন আর্ট। তখন আপনার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ ঘটে দ্বিতীয় সপ্তাহে, বিশেষ করে ওভিউলেশন নিকটবর্তী সময়ে। এ সময়ে মাথায় নতুন নতুন চিন্তার উদয় ঘটে। হয়তোবা ‘এফএসএইচ আর ইউআই’ হরমোনের কারণে এটি ঘটে থাকে।
পেপ টেস্ট
যারা জরায়ুর অবস্থা নিরীক্ষণে পেপ টেস্ট করাতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এ সময়টাই সর্বোত্তম। গবেষণায় প্রকাশ, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও শুদ্ধ ফলাফল পাওয়া যায় পেপ টেস্টে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো আপনাকে পেপ টেস্টের দুই দিন আগ থেকে যৌনসঙ্গম থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওয়াক্সিং পালা
যারা বিকিনি অঞ্চলে বা দেহের ওয়াক্সিং প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত লোম তাড়াতে চান তাদের জন্য এটিই সর্বোত্তম সময়। কারণ এস্ট্রোজেনের একটা ব্যথাপ্রশমক ভূমিকা আছে। মার্কিন গবেষকরা এটি বের করেছেন।
তৃতীয় সপ্তাহ
স্বাভাবিক দেহ তাপমাত্রা
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময়ে আপনার দেহের তাপমাত্রা আধা ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পরিমাণ বেশি থাকে ও তা পিরিয়ড সূচনা অবধি বহাল থাকে। এ কারণে দেহে গরমবোধ হতে পারে। কেন এ বাড়তি তাপমাত্রা? এ সময়ে প্রজেস্টেরন হরমোন দেহে বহমান থাকে, যা আমাদের মূল বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে তাপমাত্রার বৃদ্ধি।
আপনার খাবার গ্রহণ
ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক গবেষণাতে দেখা গেছে, মেয়েরা এ সময়ে ১০০ কিলোক্যালরি পরিমাণ বাড়তি খাবার গ্রহণ করে। দেহের বিপর্ষকমাত্রা বাড়ার কারণে এ বাড়তি ক্যালরি কোনো সমস্যা করে না। তবে আপনি যদি ভোজনবিলাসী হন তাহলে তৃতীয় আর চতুর্থ সপ্তাহে সাবধানতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়। নইলে দেহের ওজন-বিপত্তির ঝুঁকি থেকে যায়।
স্বপ্ন আর কল্পনাবিলাস
গবেষণাতে দেখা গেছে, এ সময়টাতে মহিলারা স্বপ্ন দেখে বেশি। তা কেবল সপষ্টই নয় অনেক বেশি দীর্ঘ। কল্পনাবিলাসের প্রবণতাও এ সময়ে বেশি। নিজেকে নিয়ে, আশপাশের লোকজন বা আবেগ এসব স্বপ্নকল্পনার নিয়ামক।
আপনার সুসময়
কানাডায় পরিচালিত গবেষণাতে দেখা গেছে, তৃতীয় আর চতুর্থ সপ্তাহে আপনার অংক কষার ক্ষমতা, কোনো টাস্ক সমাধানে পারদর্শিতা সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ একটাই, দেহস্রোতে ধাবমান উচ্চমাত্রার এস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন সেক্স হরমোন।
একটা দুঃসংবাদ
গবেষণাতে দেখা গেছে, অ্যাপেনডিক্সের প্রদাহের মাত্রা কেবল বেশিই নয়, তা তাড়াতাড়ি তীব্র আকার নেয় এ সপ্তাহে, ব্যথা ওঠার পর ৮৪% কে শল্য প্রক্রিয়ায় তা সারাতে হয়। যেটি প্রথম আর দ্বিতীয় সপ্তাহের মাত্রা ৫০% বেলাতে ঘটেছিল। প্রজেস্টেরনের প্রদাহ প্রতিরোধক ভূমিকা থাকলেও কেন অ্যাপেনডিক্স প্রদাহ ঘটে তার কার্যকারণ গবেষক মহলে এখনো রহস্যাবৃত।
চতুর্থ সপ্তাহ
প্রাকমাসিক সময়কাল। অনেকে এ সপ্তাহে পিএমএস-এ ভুগে থাকেন। মাসের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময়টিতে কতক অভিনব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
হৃদস্বাস্থ্য
আপনার হৃদকম্পন সামান্য বেশি থাকে আর রক্তচাপও সামান্য বেড়ে যায়। সূত্র হরমোনের মিথষিক্রয়তা। হরমোনগুলো নারীদেহের ধমনীর প্রসারণ ঘটায়-এ কারণে হৃৎপিণ্ড আর রক্তসংবহনতন্ত্র একটা সাবলীলতা পায়।
সামান্য মুটিয়ে গেছেন
ঋতুমাসের শেষ সপ্তাহে এসে সব মেয়েই কমবেশি মাত্রার ফোলা ফোলা ভাব দেখায়। দেহে কমবেশি পানি জমা হয় আর ওজনের সামান্য বৃদ্ধি ঘটে। এর স্বাভাবিক মাত্রা সাড়ে চারশত গ্রাম থেকে সাড়ে তিন কেজি হতে পারে। হরমোনের কারণে দেহের সূক্ষ্ম কৈশিক নালিকা থেকে অনেক পরিমাণ রক্তের প্লাজমা দেহকোষে চলে আসে। মস্তিষক ধারণা করে নেয় দেহে পানি স্লসাক ঘাটতি ঘটেছে। সুতরাং কিডনিকে রাসায়নিক সিগনাল দেয়া ও কিডনি পানি ধরে রাখে। আর এ কারণে এ ফোলা ফোলা ভাব আর ওজনের বিপত্তি। সমস্যা যদি আপনার বেলাতে অতিমাত্রায় প্রকট হয় তাহলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়-খাবার লবণ গ্রহণ যতটা সম্ভব কমান, প্রক্ষতিক মূত্রবর্ধক কথিত চক্রনবেরী জুস খেতে পারেন আর প্রতিদিন বিকেল বেলা এক ঘণ্টাকাল সটান হয়ে শুয়ে থাকেন। এতে বুকের সূত্র সংশ্লেষণ মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দেহে স্থিত পানির পরিমাণ কমে আসে।
স্ফীত টনটনে স্তন
দেহে বাড়তি মাত্রার পানির স্থিতির কারণে স্তনের নরম কলাগুলোর স্ফীতি ঘটে। স্তনের বেলাতে ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তার কেবল স্ফীতিই ঘটে না তা বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। এ প্রাকমাসিক উপসর্গ কমাতে গবেষক ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ই-এর পাশাপাশি প্রতিদিনকার খাবারে চিনি আর সম্পৃক্ত চর্বি কমানোর কথা বলে থাকেন।
স্বাদের কোকোলা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৫ হাজার মহিলার ওপর চালানো সমীক্ষণে দেখা গেছে, এ সময়ে চকলেটের মোহ অনেক মাত্রায় বেড়ে যেতে দেখা যায়। চকলেটের উচ্চমাত্রার শর্করা আর উচ্চমাত্রার চর্বি সম্পৃক্ত উপাদান মস্তিষেকর সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারের সংশ্লেষণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক গবেষক চকলেটের অতিমাত্রার আসক্তি ভাব কমাতে একশ মাইক্রোগ্রাম চক্রামিয়াম ও একশ মিলিগ্রাম নিয়াসিন গ্রহণের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
ত্বক আর চুলের দুঃসময়
প্রাক ঋতুস্রাব সময়ে ত্বক আর চুলের একটা দুঃসময় চলে। এস্ট্রোজেনে নারীদেহে বিদ্যমান সূক্ষ্মমাত্রার টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে প্রশমিত করে দেয়। ত্বকে তৈলগ্রন্থিতে তৈল নিঃসরণ আর ফলিকলগুলোর মুখ বন্ধ করে, যে কারণে সপট প্রকাশ পায়। ত্বকের সাবলীলতায় বিঘ্ন ঘটে। এস্ট্রোজেন কম থাকা মানে টেস্টোস্টেরন ক্রিয়া প্রকট হয়ে ধরা দেয়া। কেবল ত্বক নয়, চুলের বেলাতেও এমন অবস্থা দেখা যায়, চুল তার ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে আর খুশকি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
মনের দুঃসময়
মহিলাদের মাঝে দোকান থেকে না জানিয়ে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো জিনিস সরিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। এর নাম শপ লিফটিং। নানা মনোরোগ এর সাথে সংশ্লিষ্ট। গবেষণা সমীক্ষণে প্রকাশ, শপ লিফটিং করে থাকে এমন ঘটনার ৩০% কেবল প্রাকমাসিক সময়কালীন হতে দেখা গেছে। এদের মাঝে কোনো মানসিক সমস্যা ছিল না। অন্য সময়ের চেয়েও এ সপ্তাহে আত্মহত্যার ঝুঁকির প্রবণতা সাতগুণ বেশি।
মাইগ্রেনের ঝুঁকি
যারা মাইগ্রেনের রোগী তাদের বেলাতে এ সপ্তাহটি অনেকটা দুঃসহ স্বপ্নের মতো। মাইগ্রেনের মাথাব্যথার প্রকাশের ষাট শতাংশই প্রাকঋতুস্রাব সপ্তাহে ঘটে থাকে। হয়তোবা এস্ট্রেজেন কমে যাওয়ার কারণে এটি ঘটে থাকে।
সতর্ক থাকা চাই
কতক ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন দরকার। এ সময়ে দেহলোমের ওয়াক্সিং করতে নেই। কারণ ব্যথা সহনীয়তা কমে যায়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২ দিন আগে থেকে পিরিয়ডের বেশ কিছুদিন এ নিষেধক।
অ্যালকোহলের বেলাতে দেখা গেছে, তা রক্ত থেকে সহজে সরতে চায় না। যে কারণে মহিলা অল্পতেই মাতাল হয়ে যেতে পারে। পিরিয়ড-পূর্ববর্তী শেষ চারদিন যাবৎ এ সমস্যা।
গবেষণা সমীক্ষণে দেখা গেছে, ঘুমের ওষুধ এ সময়ে কেবল দীর্ঘ সময়কাল কার্যকরী হয় না। ঘুমের প্রভাব মাত্রাও প্রকট হতে দেখা গেছে।

আপনার ঘুম
আমেরিকান জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধনে দেখা যায়, পিরিয়ড-পূর্ববর্তী দিনগুলোতে অধিকাংশ মহিলাই পর্যাপ্ত মাত্রার ঘুম হয় না বা ঘুমালেও তা তৃপ্তিদায়ক হয় না। যারা পিএমএস-এ ভুগে থাকেন তাদের বেলাতে ঘুমের সমস্যা আরো প্রকট।
হাঁপানির সমস্যা
যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগ আছে তাদের প্রাকঋতুস্রাবকালীন এ সময়টিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন চাই। এদের এক-তৃতীয়াংশের বেলাতে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ প্রকাশ পায়। আরো লক্ষণীয় দিক হলো, উপসর্গের প্রকাশ অন্য সাধারণ অবস্থার তুলনায় প্রকট হয়ে থাকে।
এটাই সঠিক সময়
ত্বক বিশেষজ্ঞরা প্রাক-স্রাব সময়টিতে ফেসিয়াল দেয়ার জন্য যথার্থ সময় বলে থাকেন। হরমোনাল কারণে আটকে যাওয়া ফলিকলের সংখ্যা বেড়ে যায় আর ফেসিয়ালের মাধ্যমে সেগুলো দূর করে দেয়া যায় অনায়াসেই।
তবে সুখের বিষয়
শেষের সপ্তাহটিতে দেহ-মনের নানা নেতিবাচক অবস্থা। তার পরেও সুখের দিক হলো আপনার ইনটুশান ক্ষমতা একদম তুঙ্গে থাকে। আপনি অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল আর আবেগী। এগুলোর কারণ একটিই দেহে উচ্চমাত্রার প্রজেস্টেরন।
হিসেবের পালা
যদি আপনি পিল খেয়ে থাকেন এতে বর্ণিত হিসাবগুলো আপনার বেলাতে প্রযোজ্য হবে না। এর কারণ আপনার দেহের হরমোন চক্র দেহের স্বাভাবিক হরমোন থেকে অনেক পরিমাণে ভিন্ন। এ তথ্য কেবল তাদের জন্য যাদের গড় ২৮ দিনের চক্র বিদ্যমান, ১৪ দিনের মাথায় ওভিউলেশন হয় আর ২৮ দিন শেষে মাসিক শুরু হয়। যদি আপনার বেলাতে এতে কম-বেশি হয় তাহলে এডজাস্ট করে নিন।
আপনি কি বিশ্বাস করবেন দুজন ঋতুবর্তী মহিলা যদি পাশাপাশি একই রুমে থাকে তাহলে কি এক রহস্যবলে দুজনের ঋতু ঠিক একই ধরনের হয়ে যায়। তার শর্ত, সাথে পুরুষ থাকা চলবে না। একই ছাদের নিচে বসবাসরত মহিলাদের মাঝে প্রকৃতি সমন্বয় ঘটিয়ে দেয় দেহ আর মনের আঙিনায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ঋতুর আঙ্গিকে দেহ-মনের প্রকাশ কত বেশি প্রকট।
ডা. জাকারিয়া সিদ্দিকী

sunargo.info

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More