Monday, June 13, 2011

খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের যৌন কেেলংকারি ধর্মীয় নৈতিকতা আজ কোথায়


শাকিল আহমেদ মিরাজ : মনুষ্যত্ব হীনের ঘৃন্যতা বিশ্বব্যাপী আজ বড় এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ৷ নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছে তোলপাড় ৷ হিন্দু-মুসলাম-খ্রিষ্টান, সাদা-কালো কিংবা বাদামি, ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা এশিয়া যেখানে যে জাতির কথাই বলুন সব জায়গায় মানুষের আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মানবতা আর সুন্দরের যেন মৃত্যু ঘটেছে ৷ তত্ত্বের বিচারে দৃশ্যমান (!) মানবতাবাদী হিসেবে সকল ধর্মেই সাধারণ ধর্মীয় প্রধানকে মেনে নেয়া হয় ৷ সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে এখন খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী বেশি এবং স্বভাবতই তাদের ধর্মীয় প্রধান বা ধর্মযাজকের সংখ্যাটাও অন্য ধর্মের চাইতে ঢের বেশি ৷ নৈতিক অবক্ষয় আজ টান দিয়েছে সেই শিকড় ধরে! প্রত্যেক ধর্মই মানুষকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয় ৷ শিক্ষা দেয় পাপ, মন্দ অনিষ্টকর কাজ থেকে দূরে থাকার ৷ নিজের ভেতরে পশুত্ব, কামপ্রবৃত্তিকে দমন করার ৷ এ ক্ষেত্রে একজন ধর্মীয় গুরুর দায়িত্ব তো আরও অনেক বেশি ৷ তিনি ধর্মের নিয়ম- নীতি নিজে মেনে চলবেন, পাশাপাশি মানুষকে সঠিক পথ দেখাবেন ৷ মানুষের কাছে তিনি হবেন অনুস্মরণীয় ৷ সেই ধর্মীয় গুরু যখন বিপথগামী হন, তখন সাধারণ মানুষের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না ৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মযাজকদের অনেকে এখন এমনই বিপথগামী হয়ে পড়েছেন ৷ নিজেদের আদিম বাসনা পূরণ করতে গিয়ে ভুলতে বসেছেন যে তারা নিজেরা মানুষকে সুপথে আনার কাণ্ডারি ৷ তাদের এই বিপথগামিতায় ষোড়শ পোপ বেনেডিস্ট পড়েছেন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ৷ এমনকি গোটা ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ৷ অবশ্য তাদের এই যৌন নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয় ৷ তবে গত কয়েক বছরে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বজুড়ে একের পর এক যাজকের যৌন নির্যাতনের কাহিনী ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ৷ আর এসব ঘটনা বিশ্বজুড়ে পবিত্র গির্জার মতো উপসানালয়ের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে চার্চের শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নতুন কোনো ঘটনা নয় ৷ তবে নতুনত্ব হলো চার্চের যাজকদের এই সব কুকর্মের খতিয়ান প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ার ঘটনা ৷ সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ আর এতে করে বিশ্বের দেশে দেশে রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে ‘ছি ছি’ রব উছে ৷ চরম ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে ভ্যটিকান ৷ এমনকি খোদ পোপের বিরুদ্ধেও রয়েছে যৌন নিপীড়ক ধর্মযাজকদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ ৷ অবস্থা বেগতিক দেখে পোপ যৌন নিপীড়নের শিকার শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্যাথলিক ধর্মযাজকের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নিপীড়নের খবর প্রকাশ করে করেছে, ফাদার লরেন্স মার্ফি নামের উইন্সকনসিনের ওই যাজকের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক বধির শিশুকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ ছিল ৷ ফাদার লরেন্স মার্ফি ২৪ বছর ধরে উইন্সকনসিনের একটি বধির শিশুদের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ৷ ১৯৯০ সালে সংঘটিত ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক আর্চবিশপ ফাদার লরেন্স মার্ফির বিরুদ্ধে ভ্যাটিকানে দুবার চিঠি লিখে অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন ৷ বর্তমান পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তখন রোমান ক্যাথিলকদের সর্বোচ্চ সংস্থা কংগ্রেশন ফর দ্য ডকট্রিন অব দ্য ফেইথের প্রধান ছিলেন ৷ কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং কর্তৃপক্ষ লরেন্সের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি ৷ বরং ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিলেন ৷ এ ঘটনার প্রায় ২০ বছর পর বেনেডিক্ট পোপ হয়েছেন ৷ শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগের বিষভয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ভ্যাটিকান বলেছে, যুক্তরাস্ট্রের কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগের তদন্ত এবং তা বাতিল করেছে ৷ তবে ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন তখন ফাদার লরেন্স মার্ফিকে পুলিশে দেয়া হয়নি!’ ইতিম্যে পাঁচজন ভুক্তভোগীর পক্ষে দুজন আইনজীবী এই বিষয়ে মামলাও করেছেন ৷ নিউইর্য়ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতনের বিস্তর অভিযোগ প্রকাশিত হতে থাকে ৷ সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডের ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশিত হয় ৷ এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাটিকান বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে ৷ পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টসহ সব রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের চারিত্রিক সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনেই দেখা দিয়েছে চরম সন্দেহ ৷ আর রোমান ক্যাথলিকদের সবোর্চ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে এর দায়ভার এককভাবে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের ওপর বর্তায় ৷ পোপের ক্ষমা প্রর্থনা : আয়ারল্যান্ডের ঘটনার পর ভ্যাটিকান নড়েচড়ে ওঠে ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট আয়ারল্যান্ডে ধর্মযাজকদের দ্বারা শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ৷ তিনি এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে একে ‘পাপ ও অপরাধ’ ব েঅভিহিত করেছন ৷ পোপ নিজে আয়ারল্যান্ডের রোমান ক্যাথলিকদের কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখেছেন ৷ চিঠিতে তিনি যাজকদের ভর্ত্সনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আত্মমর্যাদা নষ্ট করেছ ৷ এটা বিশপদের বিবেকের ত্রুটি ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা ৷’ ভ্যাটিকারে পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনাকে ট্র্যাজেডি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তারা তাদের ব্যাখ্যায় একে প্রতিষ্ঠানিক ত্রুটি বলেও চিহ্নিত করেছেন ৷ তবে পোপ তার চিঠিতে এই ত্রুটি সংস্কারের কোনো বথা বলেননি এবং কোনো অভিযুক্ত যাজককে এই ঘটনায় পদত্যাগ করতেও বলেননি ৷ যদিও অনেক যাজক ইতোমধ্যে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন ৷ তবে পোপের এই মায়া প্রার্থনায় ভুক্তভোগীরা মোটেও সন্তুষ্ট নন ৷ কেবল ভর্ত্সনা নয়, তারা চান যৌন নিপীড়ক যাজকদের কঠোর শাস্তি ৷ শুধু তা-ই নয়, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের নিজ দেশ জার্মানি থেকেই তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে ৷ কারণ পোপ নিজেও এ ধরনের অভিযাগ ধামাচাপা দেয়ার সাথে জড়িত ছিলেন ৷ তাই তার নিজেরই সংস্কার হওয়া উচিত বলেই ভুক্তভোগীদের অনেকেই মত দিয়েছন ৷ তাদের মতে, যাজকেরাই যখন নিপীড়কের ভূমিকা পালন করেন’
সপ্তাহের সারাবিশ্ব

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More