Saturday, June 18, 2011

যৌনতার কলাকৌশল অনুশীলন


বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহামমদ ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ
যৌনতার অভিজ্ঞতা লাভের দুঃসাহসিক যাত্রাপথে পা বাড়িয়ে প্রথমেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘কোন পথে আমি শুরু করব বা এগোব?’ আমার নিকট যখন রোগীরা যৌন সমস্যা নিয়ে আসেন, তখন তাদের অনেকেই এই প্রশ্নের জবাব সম্বন্ধে ধারণা করেন যে, এর উত্তর হবে, ‘সঠিক সঙ্গী বা সঙ্গিনী তালাশ করে নেয়া।’ তাদের বিশ্বাস, তাদের সাথে যদি সঠিক ধরনের পুরুষ বা নারীসঙ্গী আসে তাহলেই তাদের ভালোবাসার মিলন হবে চমৎকার। যদিও তারা এরূপ সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে মিশেছে, তবুও তারা এখনো বিশ্বাস করতে চাচ্ছে যে, পরের সঙ্গীর মধ্যেই একটা আশ্চর্য ফলোদয় হবে। তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারছে না যে, অন্যের মধ্যে আনন্দ খুঁজতে যেয়ে তারা তাদের আনন্দ লাভের জন্য নিজেদের দায়িত্বকে ছেড়ে দিচ্ছে। উন্নত যৌনতার পরিপ্রেক্ষিতে, কোত্থেকে আমি শুরু করি? এই প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর অতি সহজ এবং সরাসরি আপনি এখন যেমন আছেন তেমনভাবেই নিজে নিজে শুরু করুন। মনে করুন আপনি নিজে একজন বৈজ্ঞানিক এবং একটি নতুন সূত্র আবিষকার করতে চাচ্ছেন। এর প্র্যাকটিক্যাল কাজের কার্যকারিতা নিজের হাতেই পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন। আপনি যে থিওরির ওপর পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন, যে থিওরির ওপর পরীক্ষা চালাবেন তা হচ্ছে- আপনিই আপনার নিজস্ব আনন্দের প্রধান উৎস। আপনার যৌন অভিজ্ঞতার দারিদ্র্য বা প্রাচুর্য শেষ পর্যন্ত সবই আপনার নিজস্ব। অন্য কেউ আপনাকে যৌন আনন্দ দিতে পারে না, এটা নিজের ভেতর থেকেই আসে।
এখানে আপনার লক্ষ থাকবে নিজেকে ভেতরের প্রেমিক হিসেবে আবিষকার করা। আপনার মধ্যস্থিত সেই প্রয়োজনীয় অংশই স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং যৌন আনন্দের পূর্ণ অভিজ্ঞতা প্রদানে পারঙ্গম। সঠিক সঙ্গী বা সঙ্গিনীর খোঁজে বাইরে না তাকিয়ে আপনি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে প্রথমে যা দিতেন তার সবটুকুই নিজেকে দিন। আপনার নিজের ভেতরেই আপনার যৌনতার নিয়তি রয়েছে-এ সত্যতা স্বীকার করা একই সাথে কামজ ও উত্তেজক। আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলা বলার দ্বারা আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি। এভাবে নিজেকে ভালোবাসার অর্থ আত্মবিশ্লেষণ, স্বকাম বা অন্যকে অগ্রাহ্য করা নয়। পক্ষান্তরে এর অর্থ হচ্ছে আপনার নিজেকে অন্তরের একজন অত্যন্ত সমমানিত অতিথি হিসেবে অভ্যর্থনা করা। যে অতিথি হবে সমমানের উপযুক্ত এবং ভালোবাসার সাথী। আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাটি আপনার নিজ থেকে আলাদা কিছু নয় অথবা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো নর কিংবা নারীও নয়। আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাটির বেশির ভাগই হচ্ছে গুণাবলি, এমন একটা অনুভব যাকে আনন্দের মুহূর্তে অথবা শান্ত অবস্থায় চিনতে পারবেন, যখন আপনি আপনার নিজের মধ্যে গভীর ধ্যানমগ্নতায় থাকবেন এবং একটা স্বাভাবিক নির্দোষতা, সরলতা এবং স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে সংযোগ স্থাপন করবেন। ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে সাধারণভাবে এ রকম ব্যক্ত করা যায় যে, আপনি নিজে যা নন নিজেকে তা না ভেবে যা আছেন তাই ভাবতে চেষ্টা করুন।
ত্রিশ বছর বয়স্কা আমেরিকান ব্যালে ড্যান্সার নাওমির গল্পটি হচ্ছে আত্মপ্রেমের দ্বারা কার্যকর আরোগ্যের এবং ভেতরের প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নাওমি তার স্বামী বিশিষ্ট ফরাসি শল্য চিকিৎসক লুইসকে নিয়ে আমার অনেকগুলো সেমিনারের একটিতে যোগ দিয়েছিল। সপষ্টত তারা একে অন্যকে ভালোবাসত এবং উন্নত যৌনতার কলাকৌশল শিখতেও ছিল আগ্রহী। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে নাওমি আমাকে তার একটা সমস্যার কথা জানাল, যা তাকে তীব্র যন্ত্রণা দিচ্ছিল। যখনই সে নিজেকে বিশেষভাবে উন্মুক্ত ও অরক্ষিত মনে করত এবং তার স্বামী তার প্রতি গভীর প্রণয়ের দৃষ্টিতে তাকাত সে হঠাৎ করে নিজেকে কুৎসিত এবং অনুপযুক্ত ভাবত। তার যন্ত্রণার সাথে জড়িত মানসিক চিত্র এবং স্মরণশক্তি আবিষকারের উদ্দেশ্যে অনুসন্ধানের কাজে আমি নাওমিকে সাহায্য করেছিলাম। কিছুকালের মধ্যে সে তার শিশুকালীন একটা অবস্থায় ফিরে এসেছিল। দৃশ্যটি বর্ণনা করতে গিয়ে সে বলল যে, সে নিজেকে একটা ৫ বছরের কিশোরীর মতো দেখতে পাচ্ছে যে একই নামের জনৈকা, হীনভাবে তোষামুদে কাকির সংসপর্শে থেকে শীতে কম্পমান একটি কুমারী কুৎসিত মেয়ের থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। নাওমি তার কাকির চেহারার বর্ণনা এভাবেই দিয়েছিল। ভবিষ্যতের ব্যালে নৃত্যশিল্পী, ছোট সুন্দরী বালিকা অত্যন্ত ভীতভাবে আবিষকার করেছিল যে, তার কুৎসিত চেহারার নামের সাথে মিলিয়ে তার নাম নাওমি রাখা হয়েছে এবং নিজে নিজে এর অর্থ খুঁজে এই সিদ্ধান্ত নিল যে, তার মা-বাবার চোখে সেও একটা কুৎসিত চেহারার মেয়ে। প্রত্যেকদিন সে আয়নার মধ্যে নিজেকে তার সেই এবড়ো-থেবড়ো কাকির চেহারাই দেখতে পেত। সে একটা অত্যন্ত ভয়াবহ অনুভব নিয়ে বেড়ে উঠেছিল যে, তার কুৎসিত চেহারাটাকে অন্যান্য সকলের নিকট থেকে গোপন রাখতে হবে। যদিও সে ছিল আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দরী। তার স্বামীও তাকে সে কথা বলত এবং তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে ভালোবাসত। সে অবচেতন মনে এই ভেবে ভয় পেত যে, তার কাকি নাওমি এবং তার এবড়ো-থেরড়ো চেহারা তার মধ্যে রয়েছে এবং এটা এত বেশিভাবে জেগে উঠতে পারে যে, তার মুখের রেখাবলিও দৃশ্যমান হবে। আমি নাওমিকে তার স্বামীর স্নেহপূর্ণ কোমল চাহনীর সাথে চোখ মিলিয়ে রেখে ততক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করতে বললাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কুৎসিত চেহারার চিন্তাটা জেগে ওঠে। আমি তাকে বললাম, ‘যখন সেই চেহারাটা জাগবে তখন গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করে মাথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে পাশের আয়নাটার মধ্যে ভালো করে নিজের চেহারাটা নিরীক্ষণ করবে’। সে আয়নাটি আমি পূর্বেই ঠিক করে রেখেছিলাম। সে যখন তা-ই করল তখন আমি তাকে সে যা কিছু দেখেছে তার একটা হুবহু বর্ণনা দিতে বললাম। সে ইতস্তত করে, অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখমণ্ডলের প্রত্যেকটি অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে লাগল যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বিশ্বাস করল যে, সে একজন অনিন্দ-সুন্দরী মহিলার মুখচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। তারপর আমি তাকে চোখ বন্ধ করে সেই মুখচ্ছবিটা সম্বন্ধে ধ্যান করতে বললাম, যে ছবিটা একটু আগে সে আয়নার মধ্যে দেখেছে। সেই ছবিটা মনের চোখে ধরে রাখো যখন তুমি পুনরায় লুইসের চোখে চোখ রাখতে যাচ্ছ। আমি তাকে সাজেশন দিলাম-দেখো তোমাকে সেই সুন্দরী মহিলাটির মতোই দেখাচ্ছে যে মহিলার ছবি তুমি এই মাত্র আয়নার মধ্যে দেখেছ। প্রত্যেকবার যখন তুমি দোদুল্যমান হয়ে যাও, তখনই মাথা ঘুরিয়ে আয়নায় মুখ রেখে বর্ণনা করতে থাকো তুমি কী দেখছ। এই নিয়ম বারে বারে পালন করতে করতে নাওমি নিজেকে একটা ইতিবাচক আস্থায় আনতে পেরেছিল। সে তখন আর নিজেকে শুধু সুন্দরীই ভাবত না, সুন্দরী হিসেবে দেখতে পেত। এটা তার ভেতরের প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলার জন্যে ছিল একটা জরুরি পদক্ষেপ। আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলার জন্য যে চর্চা, তার মূলে রয়েছে তান্ত্রিক ঐতিহ্য যাতে ভক্তদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে যেন তারা ঈশ্বর প্রেমিকদের গুণাবলি অর্জন করতে চেষ্টা করে। যেমন ঈশ্বর শিব এবং ঈশ্বরী শক্তি। তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের দৃষ্টিকে এমনভাবে নিষ্ঠার সাথে সেই আধ্যাত্মিক শক্তির সাথে যোগ করা যে, পরিশেষে তারা ঈশ্বরের সাথে একাত্ম হয়ে যায় এবং সুসপষ্টভাবে তাদের মধ্যে দেবতার গুণাবলি চলে আসে।
এখন আমার লক্ষ্য হচ্ছে আপনাকে অনুপ্রাণিত করা যাতে আপনি শুধু প্রতীক রূপে ব্যবহৃত ঈশ্বরের সাথেই প্রেমে মিলিত হবেন না বরং আপনি নিজেকেই আধ্যাত্মিক প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসতে শিখবেন। যখন আপনি নিজের সাথে একটা ভালোবাসার বন্ধনে নিজেকে জড়াতে পারবেন তখন আপনি এক সাথে যে জন ভালোবাসা দেয় এবং যে জন ভালোবাসা নেয়, দুই-ই হয়ে যেতে পারবেন। এই নিজস্ব পরিচালিত ভালোবাসার মধ্যে আপনি আপনার সমস্ত অস্তিত্বের মধ্যে সুর লহরীর সাথে মিশে নিজেকে একজন সীমাহীন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভাবতে পারবেন। আপনার মধ্যস্থিত প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যের মূল হচ্ছে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনি যত বেশি নিজেকে গ্রহণ করতে পারবেন ততই বেশি আনন্দ লাভে সক্ষম হতে পারবেন। আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি, এর দ্বারা আমি কী বোঝাতে চাই। যখন আপনি নিজের সমালোচনা করেন, আপনার একটা অংশ অন্য অংশের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দেয়, যার ফলে আপনার শক্তি দ্বন্দ্বের সমমুখীন হয়। আর নিজেকে গ্রহণ করতে পারার স্থানে আপনার শক্তি একত্রিত হয়ে বর্ধিত হয়। একান্ত এই অবস্থায়ই আপনি আনন্দ লাভে সক্ষম এবং ভালোবাসায় পূর্ণ যৌনপুলকপ্রাপ্ত হতে পারেন। যৌনপুলক তার নিজস্ব চরিত্রগত স্বভাবে আপনার পূর্ণ অংশগ্রহণ পেতে চায়। আপনার ভেতরগত প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে মিলিত হবার এবং নিজেকে গ্রহণ করতে পারার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আপনার অত্যধিক উত্তেজিত হবার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। এই সম্ভাবনা একদম সাথে সাথেই আপনার নাও আসতে পারে। কিন্তু সমস্ত বইয়ের মধ্য দিয়ে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ যৌন সম্বন্ধীয় চরম অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মৃদুভাবে দোলা দিতে দিতে আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে-নিজস্ব সত্তার কাছে।
জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস
আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আপনি কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস কীভাবে আপনার শরীরের ওপর প্রভাব ফেলছে তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। সজ্ঞান শ্বাস-প্রশ্বাস আপনাকে আপনার শারীরিক অনুভবসমূহের সাথে মিশে যেতে এবং তাদের সম্প্রসারিত করতে সাহায্য করে। প্রবহমান জীবনীশক্তির ওপর কেন্দ্রীভূত করে। এটা খুবই জরুরি কেননা আপনার ভেতরের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে জাগিয়ে তোলার সামর্থ্য নির্ভর করে আপনার নিজেকে এবং ভেতরগত অনুভবকে অভিজ্ঞতাপ্রসূতভাবে উপলব্ধি করার ক্ষমতার ওপর। আপনি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসকে একটা গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করে ভেতর জগৎ ভ্রমণে বেরুচ্ছেন। যখন আপনি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস প্রবাহের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়বেন তখন দেখতে পারবেন যে, আপনার মনোযোগকে শরীরের যে কোনো অংশের ওপর পরিচালিত করতে পারছেন, একটা স্নায়বিক উত্তেজনা ও জীবন্ত উষ্ণতা অনুভব করতে পারছেন এবং সেই অনুভবকে সারা দেহে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। আমি কী বলতে চাচ্ছি তা আপনাকে দেখানোর জন্য, চলুন আমরা একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অগ্রসর হই। কিছুটা সময় নিয়ে আপনার চোখ বন্ধ করুন, শিথিল হোন এবং চিন্তা করুন যে, একটি সুপরিচিত হাত আপনার হাতের ওপর আলতো করে ভর দিয়ে রাখা হয়েছে। হাতখানায় আরাম লাগছে।
কারণ আপনি শিথিল এবং সেই সপর্শটি গ্রহণ করতে পারছেন। আপনি দেখবেন যে, তার কথা শুনতে পাচ্ছেন, তার উষ্ণতাকে সাদরে সম্ভাষণ জানাতে পারছেন, যেন অতিসূক্ষ্ম একটা বিদ্যুৎ শক্তি আপনার মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। এই প্রবাহের অনুভবটা আপনার হাতের মধ্যে ছড়িয়ে দিন। গভীরভাবে শ্বাস টানুন, মনে করুন আপনার হাতের উষ্ণ শক্তি বাহুর মধ্য দিয়ে গ্রহণ করে তা সারা দেহে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অভ্যাস গঠন করে আপনি একটা অতিসূক্ষ্ম অনুভূতিকে আপনার সুগভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে সমাদর করতে পারছেন। এভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার জন্য একটা আনন্দের মাধ্যম হতে পারে। পরিশেষে আপনার সারা দেহকে আনন্দের সুর লহরী প্রদানযোগ্য একটা বাদ্যযন্ত্রে রূপান্তরিত করতে পারেন। আপনি সমস্ত প্রশিক্ষণের মধ্যে এই শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস গড়তে থাকবেন। অনেক ধরনের আধ্যাত্মিক অভ্যাস পদ্ধতি নিজেকে উন্নত করার জন্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক গুরুগণ আস্তে আস্তে এবং সজ্ঞানতার সহিত শ্বাস-প্রশ্বাস করার প্রতি গুরুত্ব দেন। যার অর্থ হচ্ছে আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগকে শ্বাস-প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস ত্যাগের ওপর প্রতিফলিত করুন। এই ক্রমাগত শ্বাস-প্রশ্বাস করার সতর্কতা আপনার মনোযোগকে চিন্তাপ্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, যেটা মনকে শান্ত করার জন্য জরুরি। এটা একটা অভ্যন্তরীণ নীরবতা সৃষ্টি করে যেটা অনুভূতির উপলব্ধিকে আরো ধারালো এবং তীব্র করে দেয়। এছাড়া কিছু আধ্যাত্মিক স্কুল আরো বিশেষ কতগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতি শেখায়, যাতে শরীরের মধ্যে প্রাণপ্রাচুর্যের পূর্ণতা আসে। সেটা হলো চিরন্তনী জীবনী শক্তি। যত গভীরভাবে আপনি শ্বাস গ্রহণ করতে পারবেন তত বেশি প্রাণ বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
উন্নত যৌনতায় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস হচ্ছে যা আমাদের যৌন কেন্দ্রসমূহের সাথে সংযোগ করে দেয়। যত গভীরভাবে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস করি তত বেশি আমরা আমাদের যৌনশক্তির সংসপর্শে আসি। আমাদের অনেকেই যেমনিভাবে হোক, বাতাসের কাছ থেকে ভিক্ষুকের মতো খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে আছি। সাধারণ মানুষও এক শ্বাসে এক পাউন্ড বায়ু গ্রহণ করে, যখন সেখানে সম্পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় আমাদের ফুসফুস প্রকৃতপক্ষে সাত পাউন্ড বায়ু গ্রহণ করতে সক্ষম। অনেকগুলো কারণের এটাও একটা কারণ যে, আমাদের অভিজ্ঞতার বিশেষ করে যৌন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে অনুভূতির শ্রেণী এবং গভীরতা আমাদের হাঁকে নিরাশ করে। আমরা সাধারণত আমাদের ভালোবাসার সম্ভাবনাময় যৌনপুলকের স্থানে পৌঁছার জন্য যে রূপে প্রয়োজন সেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি না।
সজ্ঞান শ্বাস-প্রশ্বাসঃ পরবর্তী শ্বাস গ্রহণ
ভালোবাসা করার ক্ষেত্রে চিন্তাধারা প্রায়ই আমাদের জ্ঞানসমূহের সীমানাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যেমন ধরা যাক আপনি ভালোবাসা করছেন এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন চিন্তা এসে হঠাৎ করে আপনাকে অন্যমনস্ক করে ফেলল- ‘আমি তার আদর সোহাগের প্রতিদানে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি, তা যদি তার পছন্দ না হয় তবে?’ ‘সে যদি লক্ষ করে ফেলে আমার তলপেটের উপরে একটা কাটা দাগ আছে, তখন কী হবে?’ এভাবে আরো অনেক কিছু হতে পারে। এই পরিচ্ছদের প্রথম অভ্যাস সজ্ঞান শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার জন্য একটা সহজ পথ করে দেয়, যাতে করে আপনি অনাহূত চিন্তার হাত থেকে মুক্ত হয়ে আপনার জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাথে যুক্ত হতে পারেন। আপনি যে কোনো সময়েই এটা করতে পারেন এবং তা সব সময়েই আপনার সহজলভ্য। আপনি এক সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখবেন এবং চিন্তাও করবেন এটা এক প্রকার অসম্ভব।
উদ্দেশ্য এবং উপকারিতা
নিয়মিতভাবে এই সাধারণ অনুশীলন অভ্যাস করে আপনার ইন্দ্রিয় সুখপ্রাপ্তির ক্ষমতা অনেক বেশি বাড়াতে পারেন। আপনি লক্ষ করতে শুরু করবেন যে, যা কিছু আপনার আছে তার প্রতি তীব্রতা বাড়ানোর অভিজ্ঞতা তালাশ না করে বরং অনুভূতির সূক্ষ্মতা বাড়িয়ে কীভাবে আরো বেশি আনন্দ পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ একটা রেডিও রিসিভার নিন যেটার পক্ষে রেডিও সিগন্যালকে বন্ধ করার শক্তি না থাকা সত্ত্বেও তার ভল্যুম হাই করতে পারে, সেটাকে অনেক পরিচ্ছন্নভাবে সম্প্রসারিত করতে পারে অথবা অপ্রাসঙ্গিক শব্দগুলোকে ফিল্টার করতে পারে। ফলে সেটা হয়তো ভারি বিট বা আঘাতগুলোকে ধ্বংস করতে পারে কিন্তু সঙ্গীতের সূক্ষ্ম সুরের ঐকতানকে পৃথক করতে পারে না। ভালো রিসিপ্‌শন পেতে হলে সেটাকে ফাইন টিউনিং করার প্রয়োজন আছে। একইভাবে আপনার অনুভূতিকে টিউনিং, ফিল্টার এবং এম্‌প্লিফাই করার ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে অর্জন করতে হবে। আর তা করতে পারলেই আপনার ভেতরের সুপ্ত প্রেমিক বা প্রেমিকা জেগে উঠবে।
প্রস্তুতি
আলোচনার মধ্য দিয়ে আপনার অনুশীলনের জন্য মূল্যবান সময় নির্ধারণের কথা বলা হবে। এটা কীভাবে করবেন সে বিষয়ে আমি কিছুটা ইঙ্গিত দিতে চাই, যেটা পরবর্র্তীতে প্রশিক্ষণের সময় ব্যবহার করতে পারবেন। এই অভ্যাস করার জন্য একটা স্থান এবং সময় নির্ধারণ করুন এবং অনুশীলনের সময় কেউ যাতে বিরক্ত না করে সেভাবে একাকী অভ্যাস করুন। নিশ্চিত হোন যে, কোনো প্রকার টেলিফোন, টেলিভিশন, দর্শক, শিশু এবং অন্যান্য আকর্ষণ থেকে যেন আপনার গোপনীয়তা রক্ষা হয়। এটা জরুরি যে আপনার সারা দিনের অন্যান্য কাজ থামিয়ে রাখুন যাতে এই অনুশীলনের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন। এটা শুধু মূল্যবান সময়ই নয়, এটা একটা পবিত্র সময় আপনার নিজের জন্য, আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য এবং যৌন শিহরণের জন্য। এই অনুশীলনের জন্য প্রথমে ঝর্ণায় গোসল করে আসুন এবং তারপর দশ মিনিট শিথিল হয়ে বিশ্রাম করুন। যেটা আপনার দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম থেকে আপনার অনুশীলনের সময়টার মধ্যে একটা পার্থক্য এনে দেবে। আপনি নিশ্চিত হোন যে, আপনার পরিধেয় কাপড়-চোপড় যেন ঢিলেঢালা এবং আরামদায়ক হয়। আপনার বুক এবং পেট থাকতে হবে অবাধ বা মুক্ত। যদি রুমের বাতাসটা তরতাজা স্বচ্ছ হয় সেটা আরো বেশি সাহায্য করবে। আপনি এই অনুশীলনটা বাইরেও করতে পারেন কিন্তু আপনাকে শিথিল হওয়ার জন্য যথেষ্ট উষ্ণ হতে হবে। এই অভ্যাসটির জন্য দশ মিনিট সময় নিন।
অনুশীলন
আরাম করে বসুন এবং চোখ বন্ধ করুন। এক মিনিটের জন্য কোনো কিছুই করবেন না। শুধু আপনার বন্ধ চোখের পেছনে কী হচ্ছে তা-ই লক্ষ করতে চেষ্টা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি একজন দক্ষ ধ্যানী হতে পারছেন, আপনার মনের মধ্যে অজস্র চিন্তার জট পাকাতে থাকবে। আপনি হয়তো আপনার ব্যবসার পরবর্তী সমাবেশ সম্বন্ধে চিন্তা করছেন অথবা চিন্তা করছেন দুপুরের খাবারের জন্য কী কী কিনতে হবে। হয়তো চিন্তা করছেন, যার সাথে আপনার একটু মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে, সত্যিকারভাবে তাকে আপনার কী বলা উচিত ছিল। হয়তো আপনি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য অথবা একটি প্রিয় কাজের জন্য দিবাস্বপ্ন দেখছেন। সম্ভবত আপনি ভাবছেন এখন চোখ খুলবেন কিনা অথবা এই অভ্যাসটা আপনি সঠিকভাবে করছেন কিনা। সাধারণত চিন্তা মানুষের মনকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রাখে যে, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস হয়ে যায় হালকা এবং ঘটমান অন্য জিনিসের প্রতি তারা তাদের সজাগ উপলব্ধি, তাদের শারীরিক অনুভূতি, যে রুমে বসে আছেন তার পারিপার্শ্বিকতা এবং কাছে উপবিষ্ট মানুষটির গুণাবলির কথা সবকিছুকেই বেমালুম বাদ দিয়ে ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে এই পর্যবেক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন পরিচালনা পদ্ধতির আদর্শকে ব্যক্ত করে দেয় আমরা আমাদের মনের মধ্যে বসবাস করি, সবচেয়ে কম বায়ু গ্রহণ করে বেঁচে থাকি এবং তার ফলে অনেক নিম্নস্তরের শক্তি এবং সতর্কতা নিয়ে কাজ করি। এখন অনুশীলনটি আবার করুন। সুবিধামতো আরামের সাথে আরাম কেদারায় বসুন এবং চোখ বন্ধ করুন। এবার আপনার মনের দিকে লক্ষ না করে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে লক্ষ করুন। যখন আপনি শ্বাস গ্রহণ করছেন অনুভব করুন যে মুক্ত বায়ু আপনার নাকের ছিদ্রপথে প্রবেশ করছে। আপনার বুক ও পেট পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করুন। যখন আপনি শ্বাস ছাড়েন তখন অনুভব করুন যে, গরম বাতাস আপনার নাকের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস ছাড়া অবস্থায় আপনার পেটের ধীরগতিতে ওঠা এবং নামা লক্ষ করুন।
লক্ষ করুন আপনি প্রত্যেকবার যখনই আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছেন আপনার মন অন্য চিন্তার দিকে সরে যাচ্ছে এবং হঠাৎ করে আপনি দেখছেন যে, নিজের অজান্তেই অনেকগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া ও ছাড়া হয়ে গেছে। আপনার সতর্কতা অন্যদিকে সরে গিয়েছিল এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসও হালকা এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে গেছে।
প্রত্যেকবার এরূপ ঘটার সাথে সাথে আপনার সতর্কতাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে ফিরিয়ে আনুন। প্রত্যেকটি শ্বাসকে পেট পর্যন্ত এবং পুনরায় শ্বাস ত্যাগকে নাকের ডগা পর্যন্ত অনুসরণ করুন। নিজে নিজে ধৈর্য সহকারে সহজ ও শিথিল হতে চেষ্টা করুন। আপনার মন্তিষেকর চিন্তা জগৎ থেকে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করা, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস প্রবাহকে লক্ষ করার মধ্য দিয়ে সম্ভব হবে। কিন্তু এটা এমনি এমনি হবে না, অভ্যাস করতে করতেই হবে। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর সতর্ক থাকার এবং তা থেকে প্রতি বার ব্যর্থ হয়ে আবার ফিরে আসার প্রতিটি মুহূর্ত গণনা করুন। এই অনুশীলনটা কয়েকবার করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি লক্ষ করতে শুরু করেন যে, আপনার চিন্তারত অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস করা এবং সতর্ক অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস করার মধ্যে পার্র্থক্যটা কী। এ অবস্থায় আপনি ভাবতে পারেন যে, কেন আমি আপনার মনোযোগ চিন্তাপ্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি? আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, চিন্তা করার মধ্যে ত্রুটি কোথায়? মন কি মানুষের মহত্তম ইন্দ্রিয় সত্তা নয়- সম্ভবত তাই। কিন্তু আপনার জীবনকে এমন স্থানে পরিচালিত করার প্রবণতা এর রয়েছে, সত্যিকার অর্থে কোনো উপকারী অবদান সেখানে নেই। চিন্তার মাধ্যমে ভালোবাসা করাটা কিছুটা আপনার জননেন্দ্রিয় দ্বারা ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস করানোর চেষ্টার মতো।
এই অভ্যাস গড়ার মাধ্যমে কিছু লোক চিন্তা না করার জন্য অধিক বেশি মনোযোগ দিয়ে শেষে ফাঁদে পড়ে যায়। এরূপ যদি আপনার সাথে ঘটে, তাহলে সজাগ থাকবেন যে, এটা আপনার মনের সাথে একটা দ্বন্দ্ব উপস্থিত করতে না পারে এবং এর দ্বারা আপনার একটা বড় ধরনের মাথা যন্ত্রণা অনুভব হতে পারে। আপনি তার কথা মোটেই শুনতে চান না- এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই চিন্তা দূরে চলে যায় না। আপনার মনকে চিন্তা করতে দিন। যতবার আপনি দেখেন যে, এটা আপনাকে একটা অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তার জগতে নিয়ে গেছে তখন একটা চাপা হাসি হাসুন এবং আপনার সতর্কতাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে এবং বর্তমানের দিকে ফিরিয়ে আনুন। এটাই যা কিছু আপনি করতে পারেন এবং এটা করাই যথেষ্ট। আপনি যখন নিজের মধ্যে ভ্রমণ শুরু করেছেন, এবার আপনি পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারেন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসকে আপনার চিন্তাধারার সাথে একত্রে গেঁথে ফেলুন। এটাই আপনাকে আপনার ভেতরস্থ প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে নিয়ে যাবে।

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More