Saturday, June 18, 2011

আগে ডাক্তার পরে বিয়ে

বিয়ের ব্রপারে আমাদের একটু সচেতনতাই পারে বহু মারাক্তক রোগ হইতে নিরাপদ রাখতে। নিজেরা সচেতন হই, অন্রকে সচেতন করি। বিয়ে শব্দটির সঙ্গে রোমাঞ্চকর সুখানুভূতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মধ্যে মিলনই নয়; বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁদের পরিবার এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে হবু স্বামী-স্ত্রী এবং তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত তথ্য যাচাই করে এমন একটি পরিবার তৈরি করার, যাতে তাঁরা উপভোগ করবেন নির্ভার-নিশ্চিন্ত জীবন, আবার তাঁদের ভবিষ্যৎ বংশধররাও হবে অনেক রোগ থেকে মুক্ত ও স্বাস্থ্যবান। সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ছেলেমেয়ের বয়স বেশি না কম, শারীরিক উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের কোনো সমস্যা, হেপাটাইটিসসহ সব টিকা দেওয়া আছে কি না, বিড়ি-সিগারেট, মদ-গাঁজা বা অন্য কোনো নেশা করে কি না, মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কি না জেনে নিতে হবে। বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব হতে পারে। বিদেশে পরিচালিত কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বয়সী বাবাদের সন্তানদের বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়াসহ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয়, তিরিশের পরে প্রথম বাচ্চা নেওয়াটা খুবই ঝুঁকির ব্যাপার। তাই যাঁদের বেশি বয়সে বিয়ে হবে তাঁদের এই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে। যেটা শুধু তাঁর নিজের নয়, সন্তানের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে। আবার মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হলেও বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ খুব ঝুঁকির ব্যাপার। আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ অল্প বয়সে সন্তান ধারণ। তাই বিয়ের জন্য বয়স বিবেচনা করাটা খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের বয়সের পার্থক্যের দিকটিও লক্ষ রাখতে হবে। বিয়ে শারীরিক ও মানসিক সফলতার জন্য পাত্রপাত্রীর বয়সের পার্থক্য ১০ বছরের মধ্যে থাকাটা ভালো। বংশগত রোগ সাধারণত যে ধরনের বংশগত রোগ বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো থ্যালাসেমিয়া, মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশিতে একধরনের দুর্বলতা), নার্ভের বিশেষ কয়েকটি অসুখ, এপিলেপ্টিক ডিজঅর্ডার (মৃগী রোগ), মানসিক অসুস্থতা_যেমন সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক), ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ওবেসিটি, অ্যাজমা, গ্লুকোমা ইত্যাদি। সন্তানদের মধ্যে সংক্রমিত হয় এমন কিছু বংশগত রোগ রয়েছে, যা শারীরিকভাবে প্রকাশিত না-ও হতে পারে। মূলত শারীরিকভাবে প্রকাশিত হয় না এমন রোগের জন্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিয়ে আত্মীয়দের মধ্যে হলে বা একই গোত্রভুক্ত হলে বিয়ের আগেই এ ধরনের পরীক্ষা করা জরুরি। বংশগত রোগের ক্ষেত্রে যেমন মা-বাবা দুজনের জিন থেকে অসুখ দেখা দেয়, আবার অনেক সময় মা-বাবা কোনো একজনের জিন থেকেও অসুখ হতে পারে। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বংশগত বা হেরিডিটারি ডিজিজের সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন হিমোফেলিয়ার (রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা) সমস্যা, কালার ব্লাইন্ডনেসের মতো সমস্যা অনেক সময় মায়ের থেকে ছেলের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত মেয়েসন্তানরা আক্রান্ত হয় না। এমন অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক রোগ মহিলাদের মাধ্যমে পরিবাহিত হয় যেগুলো তারা বহন করে, কিন্তু রোগটি তার ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় না। এটা ছেলেসন্তানদের মধ্যে সংক্রমিত হলে ক্ষতিকর হতে পারে। শরীর থেকে রক্ত বা টিস্যু নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগগুলো নির্ণয় করা হয়।


বন্ধ্যত্ব: যৌন অক্ষমতা বা ধ্বজভঙ্গ, অ্যাজোসপারমিয়া এবং সন্তান ধারণে অক্ষমতার মতো সমস্যা থাকলে দম্পতির ভবিষ্যৎ পরিণতি ভালো হয় না। হরমোন ও সিমেন (শুক্র-ধারক বীর্য) অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে এর একটি সমাধান পাওয়া সম্ভব। আশার কথা, ৯৮ শতাংশ তরুণেরই কোনো শারীরিক সমস্যা পাওয়া যায় না। মাত্র ২ শতাংশ তরুণের অ্যাজোসপারমিয়া বা সন্তান ধারণের অক্ষমতা ধরা পড়ে। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ তার সন্তান কামনা করে এবং বংশগতি রক্ষা করে। বন্ধ্যত্ব হতে পারে পুরুষ-নারী উভয়ের। তেমনি বন্ধ্যত্ব হতে পারে পারিবারিক জীবনে চরম অশান্তির বড় কারণও। তাই আপাতদৃষ্টিতে এ-সংক্রান্ত পরীক্ষা নিষ্প্রয়োজন মনে হলেও চিকিৎসা দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যৌন রোগ: বিয়ে বা শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এমন কিছু রোগ ছড়ায়, যা সঙ্গীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ইদানীং সিফিলিস, গনোরিয়া, জেনিটাল হারপিস, স্যানক্রয়েডসহ নানা যৌন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করা যায়। তাই বিয়ের আগে সম্ভব হলে ভিডিআরএল, প্যাপস্মেয়ার ইত্যাদি পরীক্ষা করে (রোগ থাকলে) তার চিকিৎসা করে নিলে নিজের পরিবারটিই রোগমুক্ত থাকবে। তাই নিজ উদ্যোগে এ-জাতীয় পরীক্ষা করা দরকার। এ ছাড়া এইডসের মতো রোগের ঝুঁকি তো আছেই। এখন আর চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়ার সময় নেই যে এ-জাতীয় রোগ থেকে একজন মানুষ মুক্ত। তা ছাড়া বিজ্ঞানের এই যুগে সেটা ভাবাও বোকামি। তাই পরীক্ষা করে নিন।


রক্তরোগ

বিয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো রক্তের রোগ নির্ণয়, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়। রক্তের গ্রুপের ভিন্নতার কারণে পারিবারিক জীবনে কিছু জটিলতা হতে পারে। যাঁদের রক্তে আরএইচ ফ্যাক্টর নেই তাঁদের রক্তের গ্রুপ 'নেগেটিভ' বলা হয়, যেমন এ নেগেটিভ, বি নেগেটিভ ইত্যাদি। নেগেটিভ গ্রুপধারী কোনো নারীর সঙ্গে পজিটিভ গ্রুপধারী পুরুষের বিয়ে হলে তাঁদের সন্তান জন্মদানের সময় জটিলতা হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। শিশুর মৃত্যু হতে পারে। এর পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, রক্তের কোনো অসুখ আছে কি না পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে।

পরীক্ষায় খারাপ কিছু পাওয়া গেলে

এ ক্ষেত্রে নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের ভালো দিকটিকেই বেছে নিতে হবে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করে ভালো হওয়া সম্ভব।
তবে এইডস বা এমন কোনো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হলে তা গোপন না রেখে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন। যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে বা যাকে জীবনসঙ্গী ঠিক করছেন তাঁকে বিষয়টি জানান। গোপন করবেন না।
জেনেটিক কাউন্সেলিং:

জেনেটিক পরীক্ষা করে জানা সম্ভব আপনার মধ্যে কী ধরনের সমস্যা আছে। আপনার সমস্যা সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কি না সেটাও জানা সম্ভব। এ জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট করতে হয়। সাধারণত আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বা বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর জেনেটিক সমস্যার কথা বা বন্ধ্যত্বের কথা জানা গেছে, সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয়।

- বিয়ের আগে যদি জেনেটিক ত্রুটির কথা জানা যায়, তবে আপনারা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

- আপনারা যদি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, সে ক্ষেত্রে বাচ্চা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁর পরামর্শ নিন। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
চলবে,,

- এর পরও যদি আপনারা বাচ্চা নিতে চান, তবে গর্ভকালীন প্রিনেটাল স্ক্রিনিং করাতে হবে। এতে বাচ্চা ওই জেনেটিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে কি না তা আগে থেকে জানা যাবে। যদি শিশুর মধ্যে ওই সমস্যা না থাকে, তবে কোনো ভয় নেই। তবে শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটির লক্ষণ পাওয়া গেলে অ্যাবরশন করানোর প্রয়োজন হতে পারে। কারণ একটি শিশু যদি জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তবে তার সেই কষ্ট বহন করতে হবে পুরোটা জীবন_এটা ভেবে দেখতে হবে।

- এত কিছুর পরও যে বিষয়টি লক্ষ করতে হবে, যদি জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বাচ্চা জন্ম নেয় তবে তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য পারিবারিক, সামাজিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ এরা আপনাদের সন্তান ও আপনাদের জেনেটিক সমস্যার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত।


0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More