Saturday, June 18, 2011

হোয়াই ইজ সেক্স ফান ২: বহুগামীতা এবং যৌন দক্ষতা


মানুষ সাধারণত পরিবারে বসবাস করলেও, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা বড় হওয়ার সময় চারপাশে বহু উর্বর পুরুষ-নারী থাকলেও, সে টোপ মানুষ নানা কারণেই এড়িয়ে চলে। এর নানা কারণ আছে। তবে অবাক ব্যাপার হল, আমরা যৌনদক্ষতার চিহ্ন (সামনে পড়বেন), সমাপনহীন যৌন গ্রহনযোগ্যতা এবং আনন্দমূলক যৌনতা মিলিয়ে মোটামুটি অনন্য এবং বিপদজনক একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যদিও আমাদের নিজেদের বিবর্তনের সাথে এর সম্পর্ক আছে। বিশেষত যৌনদক্ষতার চিহ্নের বিষয়টি বেশিরভাগ পশুপাখির মধ্যেই বিদ্যমান নানাভাবে, বেবুনের লাল যৌনস্থান থেকে শুরু করে গাভীর নিজের জ্ঞান বিবেচনা করুন। এখানে আরো বিপদজনক যে, মানব-নারী নিজেও তার যৌনঅদক্ষতার চিহ্ন দিতে অক্ষম; সে নিজে বলতে পারে না সে উর্বর না অনুর্বর। ডায়মন্ড দেখিয়েছেন যে এটিও হয়তো বিবর্তনজনিত কারণে ঘটেছে। এখানে মনে রাখা দরকার যে, মানবযৌনতার বিষয়টি অনেক জটিল এবং এ ব্যাপারে অজস্র প্রতিযোগী তত্ত্ব আছে। কিছু পড়লে হাসবেন, কিছু অপমানজনক মনে হবে (যেমন নারীর নিজের যৌন অবস্থান 'ব্যবহার করা' 'মুদ্রা' হিসেবে, 'অপেক্ষাকৃত সেরা' পুরুষের জন্য, বা প্রতিযোগী পুরুষের মাধ্যমে সেরা জিনের বংশবৃদ্ধি ইত্যাদি)।
একটি বড় কারণ হল বিবাহবহির্ভূত যৌনতার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া। এটি কেবল সঙ্গী বা তার পরিবারের প্রতিক্রিয়ার কারণেই নয়, মানবসমাজের স্বতন্ত্রতার কারণেও ঘটে।
তবে মানব-পুরুষেরও নিজের বংশবৃদ্ধির প্রাকৃতিক বাসনা থাকে। হাজার হাজার, বা শয়ে শয়ে, বা দশে দশে, বা একাধিক নারীর সাথেও যৌনকর্মের একটা বাঁধা হল, মানবশিশুর বিশেষ যত্ন লাগে। শয়ে শয়ে বাচ্চা হলেও এদের যত্ন না দিলে এরা প্রায় সবাই মারা যাবে। মানুষের শিশু বিশেষভাবে অসহায়, অন্যান্য বেশিরভাগ প্রাণীর শিশু অনেক শক্ত-সমর্থ এবং স্বনির্ভর।
সুতরাং এখানে আরেকজন মানুষ, এবং বিশেষত একজন পুরুষের পক্ষে আরেকজন নারীর সাথে গাটছঁড়া বাঁধা বেশ সুবিধাজনক (এখানে পুরুষ নারীর ভিন্ন বিবর্তিত সামাজিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আবার আধুনিক সমাজে পরিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে কেবল আনন্দমূলক যৌনতাও বাড়ছে)। এই বিবর্তনগত ব্যবস্থা মানুষের শিকারী যুগ থেকেই চলে আসছে। এটি বিয়ের প্রাতিষ্ঠানিকতার বড় একটি কারণ। তবে দিনের পর দিন সমাজের উন্নতির সাথে সাথে এই ব্যবস্থা সেভাবে বিবর্তিত হয়নি। বলা যায়, আধুনিক যুগে এ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োজন অনেকটাই কমেছে।
পুরুষের গণ-বহুগামীতা থেকে দূরে থাকার আরো কিছু কারণ আছে, যদিও এ ব্যাপারে অনেক নির্বচন আছে। কেউ কেউ বলেন মানবসমাজের নারীর সঠিক যৌনসময়ের কোন বাহ্যিক প্রতিক্রিয়ার অভাব। তাছাড়া আছে লম্বা অপেক্ষা সময়। আপনি হয়তো না জেনে কোন গর্ভবতী মহিলার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। তাছাড়া, আপনি যৌনকর্ম করার পর আরেকজন করলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন না যে সন্তান আপনারই হবে। তবে ইদানিং সন্তান প্রতিষ্ঠার এই বাসনাকে অন্তত উন্নত সমাজে মানুষ কেবল আনন্দদায়ক যৌনতা দ্বারা অনেকাংশে প্রতিস্থাপন করেছে। তবে এরা বৃহত্তর সমাজে এখনো ক্ষুদ্রাংশই বটে। বেশিরভাগ মানুষ, নারী বা পুরুষ এর জন্য বংশ টিকিয়ে রাখা এখনো খুব শক্তিশালী একটি প্রাকৃতিক বাসনা।
সেইভাবে যদি দেখি (যৌনকর্মের দক্ষতার দিক থেকে), এদিকে আরেকটি নির্বচন যৌন বাহ্যিক প্রতিক্রিয়ার অভাবকে প্রশংসাই করেছে। পুরুষ যদি নারীর চেহারা দেখেই বুঝে ফেলতো যে যৌনকর্মে বংশবৃদ্ধি হবে না, তবে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিয়ের অবস্থান খুবই নড়বড়ে হতো, কারণ পুরুষের 'সুবিধা' অনেক কমে যেতো। বহুগামীতাও অনেক বেড়ে যেতো। সঙ্গীর অভাবে নারীও ঠিকমত শিশুপালন করতে পারতো না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মানুষের শিশুপালনের বাসনা যৌনকর্মে একটি গুরুত্বপূর্ন চলক, এবং শিশুপালন যৌনকার্মিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিতেও মনে রাখার মত একটি চলক। এখানে পারস্পরিক প্রতিযোগিতাও একটি বড় ব্যাপার, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে। তবে পুরুষ যদি প্রতিযোগিতা এবং শিশুবাসনা অবহেলা করতে পারে, আনন্দদায়ক যৌনতার তেমন কোন অসুবিধা থাকে না, যদিও এটি 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' বলা যায়। আধুনিক সমাজে এই প্রকৃতিবিরুদ্ধতার তেমন কোন শাস্তি নেই। তবে এই একই বহুগামীতা নারীর পক্ষে তুলনামূলকভাবে কষ্টকর।
জ্যারেড ডায়মন্ড এ পর্যায়ে নিজের কাজকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যে, লোকে তাকে বলবে (এবং আমি এ নিয়ে আলোচনা করার পর লোকে আমাকেও বলছে), "আরে ব্যাটা গবেষক, এটা নিয়ে বই লেখার বা গবেষণার কি আছে? তুমি ডায়মন্ড মিয়া একটা ইডিয়ট! তুমি বুঝো না মানুষ কেন দিনরাত যৌনকর্মে নিজেদের নিয়োজিত করে? কারণ এটা মজার!! শেষ! এটা নিয়ে বই লেখে, হেহ!!"
কিন্তু এই উত্তর আসলেই পূর্ণাঙ্গ নয়। হ্যাঁ, পশুপাখিরও যৌনতায় আনন্দ নেই তা নয়। বরং অনেক পশুই মানুষের থেকে অনেক বেশি সময় যৌনকর্মে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু, সাধারণত নারী পশুকে উর্বর করা সম্ভবপর হলেই পার্শ্বফলাফল হিসেবে এই আনন্দের ব্যাপারটা আসে। মানুষের মত সবসময়, যখন তখন না। কুকুরের জন্য যৌনতা আনন্দদায়ক বটে, তবে কেবল 'ঠিক সময়ে'। বাকি সময় যৌনকর্ম সম্পাদন এসব পশুপাখির পক্ষে সময় নষ্ট করা মাত্র, এবং এতে আনন্দের কিছুই নেই।
এখানে প্রাকৃতিক পছন্দের ব্যাপারও আছে। যৌনকর্মে কেবল কাজ হলেই সেটা প্রকৃতির জন্য কার্যকর। হুদাই যৌনকর্মে সময় নষ্ট করা প্রাকৃতিকও নয়। অথচ মানুষ বিশাল সময় বেহুদা যৌনকর্মে সময় নষ্ট করে, যেটা প্রকৃতিবহির্ভূত।
এখানে আমরা একটু আলোচনা করি কেন অন্যান্য পশু, এবং মানুষের জন্যও, যৌনকর্ম 'সময় এবং কষ্টসাপেক্ষ' ব্যাপার।
কেন মানুষের নিজের প্রিয়পাত্রকে প্রয়োজনবিহীন যৌন আনন্দ দেয়া অনুচিৎ? হাসি
ক) শুক্রাণু-ডিম্বাণু, বা স্পার্ম উৎপাদন, বিশেষত পুরুষদের জন্য, অনেক শক্তিখরচের ব্যাপার। গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব পোকামাকড়/কেঁচো কম স্পার্ম উৎপাদন করে তাদের জীবনকাল বেশি। মানুষের বেলায় এমন কোন গবেষণা যদিও ডায়মন্ড সরাসরি দেখাতে পারেননি।
খ) যৌনকর্মে নিয়োজিত সময় খাদ্য সন্ধানে ব্যবহার করা যায়।
গ) যৌনকর্মে নিয়োজিত জোড়া শত্রু বা অন্যান্য প্রাণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হতে পারে, বিশেষত যৌনভাবে উত্তেজিত অবস্থায়।
ঘ) যৌনকর্মের উত্তেজনায় মানুষের মৃত্যু হতে পারে। উদাহরণ ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন ৩, বা নেলসন রকেফেলার।
ঙ) নারী যৌনসঙ্গীর জন্য মারামারিতে মানুষ এবং অন্যান্য পশুপাখির প্রায়ই ভয়াবহ ক্ষতি হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এ ক্ষতি সবসময় দৈহিক না হলেও অন্যান্য নানাদিক দিয়ে হয়। এই প্রতিযোগিতা আবার বহুগামীতা-প্রতিরোধকও।
চ) একইভাবে, নারী যৌনসঙ্গীর সাথে লুকিয়ে যৌনকর্মেরও ভয়ানক প্রতিক্রিয়া সাধারণত থাকে, যদিও মানবসমাজ এ ব্যাপারে ইদানিং কিছু দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন দেখাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন আশা করা অমূলক।
সুতরাং মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে, যৌনভাবে 'দক্ষ' হলে, অর্থাৎ কেবল প্রয়োজনে যৌনকর্ম সম্পাদন করলে, সেটা মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী হওয়ার কথা, তাই না? আমাদের অদক্ষতার জন্য আমরা ঠিক কি উপকার পাচ্ছি? এর কিছু উত্তর প্রথমাংশে পাবেন, বাকিটা সামনের একটি লেখায় দেয়ার ইচ্ছা রইলো।
সচলায়তন

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

নারী পুরুষের কামলিলা দুনিয়া

বাৎসায়ন কামসূত্র

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More